National news

প্রেমিককে খুঁজে এনে মায়ের বিয়ে দিলেন মেয়েরা!

অঞ্জলিকে মনে আছে? মনে আছে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমার ছোট্ট অঞ্জলির সেই উদ্যোগকে? মৃত মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে বাবার সঙ্গে কলেজ বন্ধু অঞ্জলির বিয়ে দিয়েছিল সে। হ্যাঁ, বন্ধুর নামও ছিল অঞ্জলি। কিন্তু বাস্তবের নাটকীয়তা সিনেমাকেও ছাপিয়ে যায় বহু সময়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ১৬:৪১
Share:

মা অনিথা আর বিক্রমন।

অঞ্জলিকে মনে আছে? মনে আছে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমার ছোট্ট অঞ্জলির সেই উদ্যোগকে? মৃত মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে বাবার সঙ্গে কলেজ বন্ধু অঞ্জলির বিয়ে দিয়েছিল সে। হ্যাঁ, বন্ধুর নামও ছিল অঞ্জলি। কিন্তু বাস্তবের নাটকীয়তা সিনেমাকেও ছাপিয়ে যায় বহু সময়। যেমন কেরলের কোল্লামের এই ঘটনা। বাবার মৃত্যুর পর, মায়ের কিশোরীবেলার ভেঙে দেওয়া প্রেমকে ফিরিয়ে দিল দুই মেয়ে।

Advertisement

সালটা ১৯৮৪। আজকের দুই মেয়ের মা অনিথা তখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন। বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়ে অনিথার পরিচয় হয় বিক্রমনের সঙ্গে। বিক্রমণ সেই কোচিং সেন্টারে পড়াতেন, পাশাপাশি করছেন জোরকদমে রাজনীতি। সিপিএমের পার্টি মেম্বার ছিলেন। আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দু’জনের। প্রেম। কিন্তু অনিথার সেই প্রেম বেশি দিন চাপা থাকেনি। বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। তার পরই যত গোলমালের সূত্রপাত। বাবার রক্তচক্ষুর সামনে অনিথা হার মানতে বাধ্য হন। অনেকটাই বাধ্য হন প্রেমিক বিক্রমনকে বাঁচানোর জন্য। কারণ, সম্পর্ক না ভাঙলে বিক্রমনের প্রাণহানির আশঙ্কা করেছিলেন অনিথা।

বাবার ‘মিলিটারি’ শাসনের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণের পরও অবশ্য আরও অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল জীবনে। বিক্রমনের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও উপায় যাতে না থাকে, তার ব্যবস্থাও করা হয়। স্কুল থেকেই তাঁকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর পাত্র দেখেশুনে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। মদ্যপ স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করতে করতেই জন্ম হয় দুই মেয়ে আথিরা আর আশিলির। এভাবেই চলছিল। কিন্তু ছোট মেয়ের জন্মের পর অত্যধিক মদ্যপানেই অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন স্বামী। কঠিন লড়াই শুরু হল অনিথার। একা একা দুই মেয়েকে মানুষ করার লড়াই।

Advertisement

এ পর্যন্ত এ কাহিনীতে তেমন নতুন কিছু নেই। বরং বারবার দেখা একটা ফ্যাকাশে ছবি। এ দেশের বহু মেয়ের জীবন এভাবেই বুকে চেপে থাকা হাহাকার, যন্ত্রণা, হতাশা নিয়েই কেটে যায়, শেষ হয়। কিন্তু জীবনের জন্য, ভালবাসার জন্য অন্য গানও তো বাঁধা হয়, কম হলেও হয়। সেটাই দেখালেন অনিথার দুই মেয়ে, আথিরা আর আশিলি।

বন্ধুর মতোই, বড় হয়ে ওঠা মেয়েদের কাছে নিজের জীবনের সব গল্প বলেছেন অনিথা। কিছু লুকোননি। বলেছিলেন বিক্রমনের কথাও। কোনও আশা থেকে অবশ্যই নয়। কারণ সেই হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকের সঙ্গে আর কখনও দেখা হয়নি। তিন দশকের দীর্ঘ সময়ে জীবন যে কতটা বদলে যায় তা অনিথার অজানাও নয়। কিন্তু জীবনদেবতা বোধহয় মুচকি হাসতে হাসতে এখানে অন্য এক নাটকের কলাকুশলী তৈরি করে রাখছিলেন।

আরও পড়ুন: চা-কফির পেয়ালা পরিবেশনেই দিন কাটে সোনার মেয়ে গুরবীরের

আর বিক্রমন? ৩২ বছর আগে কেড়ে নেওয়া প্রেমের সেই যন্ত্রণাটা আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে গেলেও, ভুলতে পরেননি সেই কিশোরী মেয়েটাকে। বিয়েও করেননি। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন কোল্লাম থেকে অনেক দূরে।

সেই বিক্রমনকে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ঘেঁটে ঘেঁটে সত্যিই একদিন বের করে ফেললেন বড় মেয়ে আখিরা। তারপর একদিন... হ্যাঁ, দেখা হল দু’জনের। ৩২ বছর পর। বয়স বেড়েছে দু’জনের। কৈশোর আর তারুণ্যের সেই শরীর হারিয়ে গেছে। তবু, চিনতে অসুবিধে হয়নি। দুই মনেই জমে থাকা বিরহের বাষ্প জমে কতটা জল হয়ে চার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিল তা সাক্ষীরাই জানেন। কিন্তু অনিথার দুই মেয়ে শুধু দেখা করিয়েই থেমে থাকেননি। চার হাত এক করে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিলেন মায়ের। গত ২১ জুলাই ছিল সেই বিয়ের দিন। আর মায়ের অসম্পূর্ণ প্রেমের এই পরিণতি পাওয়ার কাহিনী নিজের ফেসবুক পেজে লিখে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ারও করেছেন আথিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন