নিঃশব্দে গত বছর কোনও একটা সময় মুম্বইয়ে এসে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছে দাউদ ইব্রাহিমের স্ত্রী। জেরার মুখে তদন্তকারীদের এই তথ্যই দিল দাউদের ভাই ইকবাল কাসকর।
মুম্বইয়ের নাগপাড়া থেকে মঙ্গলবার তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে কাসকরকে। মুম্বইয়ে দাউদের রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার দেখাশোনা সে-ই করত। গত চার দিন ধরে কাসকরকে দফায় দফায় জেরা করেছে ঠাণে পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)।
সূত্রের দাবি, কাসকর জানিয়েছে গত বছর মুম্বইয়ে এসেছিল দাউদের স্ত্রী মেহজবিন শেখ ওরফে জুবিনা জারিন। কবে এসেছিল, তা নিয়ে কিছু না বললেও কাসকর জানায়, মুম্বইয়ে বাবা সেলিম কাশ্মীরির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল দাউদের স্ত্রী। যে ভাবে নিঃশব্দে এসেছিল, পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সে ভাবেই দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। দাউদ যে পাকিস্তানেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, এ কথা বৃহস্পতিবারই স্বীকার করেছিল কাসকর। ঠাণের এক পুলিশ অফিসার জানান, দাউদ একা নয়, আর এক ভাই আনিস ইব্রাহিম ও সঙ্গী ছোটা শাকিলও যে তার সঙ্গেই রয়েছে জেরায় এ কথা স্বীকার করেছে কাসকর। সেই সঙ্গে দাউদের বাড়ির চারটে ঠিকানাও পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে সে। কাসকরের দাবি, তিন বছরে অন্তত চার বার বাড়ি বদলেছে দাউদ। বেড়েছে তার নিরাপত্তাও। ভারতীয় কোনও তদন্তকারী সংস্থা যাতে আড়ি না পাততে পারে, তাই ফোনে এ দেশের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে দাউদ। ইদের মতো কোনও উৎসবের সময়ে আনিস বাড়িতে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেয়। কোন নম্বর তা অবশ্য জানা যায়নি।
কাসকর জানিয়েছে, ব্যবসা নিয়ে আনিসের সঙ্গেই মূলত কথা হতো তার। সম্প্রতি আনিসকে সে চার থেকে পাঁচ বার ফোনও করেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে কাসকর। সে আরও বলেছে, দাউদের ব্যবসার পরিধি আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। এখন তা ছড়িয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকাতেও। দক্ষিণ আফ্রিকার মাদক মাফিয়াদের সঙ্গে দাউদের রীতিমতো যোগাযোগ আছে বলেও জানিয়েছে কাসকর। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে গত কালই দাবি করেন, দাউদ অসুস্থ। জীবনের শেষ সময়টুকু নিজের দেশে কাটাবে বলে সে নিজেই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভারতে ফিরতে চাইছে। আর ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কথা ভেবে নয়াদিল্লিও এই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বলে তোপ দেগেছিলেন তিনি। এ দিন জেরায় সে প্রসঙ্গও তোলা হয় বলে জানান ঠাণে পুলিশের এক সূত্র। তাতে কাসকর জানিয়েছে, দাউদ সুস্থই রয়েছে। দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে সে।
১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত দাউদের ‘লোকদের’ বিরুদ্ধে মুম্বই ও ঠাণেতে তোলাবাজির অভিযোগ ক্রমে বাড়ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ঠাণে পুলিশ জানায়, অপরাধ দমন শাখার একটি দল ইতিমধ্যেই বিহার রওনা হয়েছে। সেখানে তোলাবাজির ঘটনায় মামলা করাতে অভিযোগকারীদের শাসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে দাউদের ‘লোকজনের’ বিরুদ্ধে। তাদের শায়েস্তা করতে নিশানাবাজও ভাড়া করা হয়েছে বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে পুলিশ।