—ফাইল চিত্র।
রাফাল আর সিবিআই নিয়ে কম ডামাডোল চলছে না। তারই মধ্যেই আজ নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে নতুন বিড়ম্বনায় ফেলে দিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান মুখপাত্র স্বর্ণশ্রী রাও রাজশেখর। তাঁর এক টুইটে বেজায় চটেছেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। অপমানিত বোধ করছেন তাঁদের অনেকে। ‘ভুলবশত লিখেছেন’ বলে জানিয়ে ওই টুইট মুছে ফেলার পরেও অস্বস্তি যাচ্ছে না সরকারের। তড়িঘড়ি ছুটিতে পাঠানো হয়েছে স্বর্ণশ্রীকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিয়েছেন কর্নেল আমন আনন্দ। বিতর্ক এমন মাত্রা নিয়েছে যে, বিজেপিরই সাংসদ তদন্ত দাবি করেছেন এ নিয়ে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান মুখপাত্রের পদে স্বর্ণশ্রীকে রাখা না-রাখা নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়েছে রাজধানীতে।
বিতর্কের শুরু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আমলার গাড়ির বনেটে সেনাবাহিনীর পতাকা লাগানো নিয়ে। সেনাবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের অভ্যন্তরীণ আর্থিক উপদেষ্টার গাড়িতে লাগানো ছিল সেনাবাহিনীর ওই প্রতীক। সেই ছবি রিটুইট করে প্রাক্তন নৌসেনাধ্যক্ষ অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ এর সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক জন অসমারিক ব্যক্তি সামরিক প্রতীক ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য না-করা হলেও, দায়িত্বে থাকা জিওসি-র উচিত তাঁর উপদেষ্টাকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, এটা তিনি অনুমোদন করছেন না।’’
এর জবাবেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান মুখপাত্র স্বর্ণশ্রী লেখেন, ‘‘আপনি (সেনাবাহিনীর) অফিসার থাকার সময়ে আপনার বাড়িতে যে জওয়ানদের অপব্যবহার করা হত, তার বেলা? ফৌজি গাড়িতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়া নিয়েই বা কী বলবেন? সরকারি গাড়িতে ম্যাডামের বাজার-অভিযানের কথাও ভুললে চলবে না। আর পার্টির তো কোনও শেষ নেই... এ সবের খরচ কে জোগায়?’’
সকাল তখন ন’টা আট। তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে স্বর্ণশ্রীর ওই মন্তব্যের। সেনাবাহিনীর তরফে সরাসরি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে প্রাক্তন সেনাকর্মীরা তুলোধোনা করতে থাকেন স্বর্ণশ্রী ও ‘তাঁর মতো মানসিকতার’ আমলাদের। স্রেফ কাগজ-ঘাঁটা আমলাদের পক্ষে যে সামরিক বাহিনীর কর্মীদের অবদান ও মর্যাদা বোঝা সম্ভব নয়, তা নিয়ে কটাক্ষ আসতে থাকে সমানে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান মুখপাত্রের পদে সাধারণত ইন্ডিয়ান ইনফর্মেশন সার্ভিসেসেরই কাউকে নিয়োগ করা হয়। স্বর্ণশ্রী ডিফেন্স অ্যাকাউন্টস সার্ভিসেস ক্যাডারের। তাঁকে এই পদে বসিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হর্ষ কপূর সরাসরি তাই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করেন, ‘‘ম্যাডাম, সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করাটা আপনার দায়িত্ব, অপমান করা নয়। কিন্তু তিন বাহিনী সম্পর্কে সরকারের আসল মনোভাবটা সামনে চলে এসেছে। এমন এক জনকে আপনার মন্ত্রকের মুখপাত্র করে রাখাটা দেশের পক্ষে অপমানজনক।’’
বেজায় চটেছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরাও। বিজেপির সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর ওই মুখপাত্রের এমন ঔদ্ধত্য প্রকাশ নিয়ে তদন্তেরও দাবি করেছেন। মোদী সরকার বরাবরই জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা করে এসেছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রথম বছর পূর্তিতে তেমন কিছু না করলেও, লোকসভা ভোটের মুখে ওই অভিযানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ শুধু নয়, বিজেপি শিবিরও মানে, বাহিনীর বীরত্বগাথা প্রচার করে জাতীয়বাদী হাওয়া তোলার চেষ্টা করছেন মোদী, অমিত শাহেরা। প্রাক্তন নৌসেনাধ্যক্ষের প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্রের এমন মন্তব্য সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ দিনভর জোর তরজা চলে এ নিয়ে। প্রশ্ন তোলা হয়, জীবন দিয়ে যাঁরা দেশরক্ষা করেন, তাঁদের প্রতি এই কি মোদী সরকারের মনোভাব!
অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ নিজে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ক্রুদ্ধ চাপানউতোরের পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, উভয় তরফেরই প্রতিক্রিয়া আরও সংযত হওয়া উচিত। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে অসামরিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নিয়ে আরও ভাবা উচিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। বাহিনীর অফিসারদেরও ব্যক্তিগত আচরণের যে দিকগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা নিয়ে আত্মসমীক্ষা করা উচিত।