‘মনে হয় বাঁচব না, পরিবারকে দেখো’

এই অডিয়ো ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৫
Share:

পরিজনের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক ব্যক্তি। ছবি সৌজন্য টুইটার।

আনাজ মান্ডির বাড়িটার লেলিহান শিখা গিলে খেয়েছে তাঁকে। তার আগে বন্ধু মনুকে শেষ ফোনটা করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বিজনোর এলাকার বছর ৩০-এর যুবক মুশারফ আলি। বলেছিলেন, ‘‘করোল বাগে চলে এসো। আগুন লেগেছে। ভাই, মনে হয় আর বাঁচব না। আমার বউ আর বাচ্চাদের দেখো। শ্বাস নিতে পারছি না। কী করে আগুন লাগল, জানি না। কোনও উপায় নেই আর। সারা বাড়িতে আগুন।’’ এই অডিয়ো ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। মুশারফের স্ত্রী, তিন মেয়ে আর একটি ছেলে রয়েছে। আনাজ মান্ডির ওই কারখানায় তিনি কাজ করছিলেন গত চার বছর ধরে। মুশারফের বন্ধু মনু বারবার তাঁকে ভরসা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘দেখো দমকলের গাড়ি এসে যাবে। বেরিয়ে আসার একটা রাস্তা ঠিক বার হবে।’’ আশ্বাস সার, ফেরেননি মুশারফ।

Advertisement

দিনের শেষে কাছাকাছি হাসপাতালে অনেকেই উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। ১৪ বছরের মহম্মদ সাহমত এবং ১৩ বছরের মহম্মদ মাহবুবের খোঁজ করছিলেন তাঁদের স্বজনেরা। মায়াপুরীতে আসবাব কারখানায় কাজ করেন মহম্মদ আরমান। তিনিই ওই দুই কিশোরের ছবি দেখাচ্ছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বলছিলেন, ছেলে দু’টি ওই সময়ে ওখানে ছিল।

পরে জানা যায়, মর্গে পৌঁছে গিয়েছে মাহবুবের দেহ। তার কাকা মহম্মদ হাকিম হরিনগরে থাকেন, পেশায় রিকশাচালক। ভাইপোর দেহ দেখে সামলে রাখতে পারেননি নিজেকে। কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘‘আল্লা যদি চান, সাহমতকে অন্তত খুঁজে পাব।’’ মর্গ থেকে বেরিয়ে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সমস্তিপুরের ওয়াজিদ আলি। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমার ১৮ বছরের ভাইপো মহম্মদ আতামুলের দেহ দেখে এসেছি। আমার দুই ভাই সাজিদ (২৩) আর ওয়াজিরের (১৭) কোনও খোঁজ নেই।’’ তাঁদের বাবা-মা থাকেন সমস্তিপুরে। ওয়াজিদ বলেছেন, ‘‘বাবা-মাকে খবর দেওয়ার সাহস হচ্ছে না।’’ মহম্মদ আসিফ নামে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওখানে হাতব্যাগ তৈরির আর একটি কারখানায় কাজ করতেন তাঁর দুই সম্পর্কিত ভাই ইমরান এবং ইকরাম। তাঁরা অল্পবিস্তর আঘাত পেয়েছেন। ইমরান এবং ইকরাম থাকেন উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে। আসিফের কথায়, ‘‘আমি ভজনপুরায় থাকি। ভোর ছ’টা নাগাদ মোরাদাবাদ থেকে ফোন এল, ভাইদের আঘাত লেগেছে শুনলাম। ছুটলাম আনাজ মান্ডি। পুলিশে পুলিশে তখন ছয়লাপ। ওদের খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে পুলিশই জানাল ওদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু তার পরেও তাঁদের কোন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পাননি আসিফ। একই ঘটনার কথা বলেছেন মনোজ নামে বছর ২৩-এর এক তরুণ। ‘‘আনাজ মান্ডির ব্যাগ তৈরির কারখানায় আমার ভাই নবীন (১৮) কাজ করে। ওর বন্ধুরা ফোনে জানাল, ভাই আগুনে আহত। কিন্তু এখনও জানি না, কোন হাসপাতালে ওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

ওই বাড়িটির কাছাকাছি আর একটি বাড়ির মালিক মহম্মদ মাসিহ জানিয়েছেন, আগুন লাগার পরে অনেক শ্রমিক ওই বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেছেন। কেউ আবার ছাদ দিয়ে বা চিমনির পাশ দিয়ে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। শেষমেশ বেঁচেছেন কি না, জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন