নোটবন্দির ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুললেন আরও এক প্রাক্তন আমলা। তা-ও আবার অবসরের মুহূর্তেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের পরে এ বার সদ্য-প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়ত। প্রভাবশালীদের উপরে নোটবন্দি কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট চলাকালীনই গত কাল অবসর নেন রাওয়ত। কর্মজীবন নিয়ে একটি সংবাদপত্রের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নোটবন্দির দু’বছর পরে কালো টাকার উপরে তার কোনও প্রভাব দেখা যাচ্ছে কি না, কারণ ভোটে টাকা ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে রাওয়ত নিজেই মাঝেমধ্যে মুখ খুলেছেন। উত্তরে রাওয়ত বলেন, ‘‘একেবারেই প্রভাব পড়েনি। নোট বাতিলের পরেও ভোটের সময়ে রেকর্ড পরিমাণ কালো টাকা উদ্ধার করেছি। এমনকি এই পাঁচ রাজ্যে ভোটের সময়েও প্রায় ২০০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ভোটে এই টাকা আসছে খুব প্রভাবশালী লোকেদের কাছ থেকে, এই সমস্ত পদক্ষেপে (নোটবন্দি) যাঁদের কোনও ক্ষতিই হয়নি।’’
অরুণ জেটলিকে মন্ত্রণা দেওয়ার দায়িত্ব দীর্ঘদিন ছিল যাঁর উপরে, সেই সুব্রহ্মণ্যনের লেখা একটি বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশিত হয় দিন তিনেক আগে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘নোটবন্দি এক বিশাল, নির্মম আর্থিক ধাক্কা। বৃদ্ধির হার আগেই কমছিল। তাকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল এক লপ্তে ৮৬ শতাংশ নোট বাতিলের ঘোষণা।’’ তারও আগে রঘুরাম রাজন বলেছিলেন, নোট বাতিল এবং জিএসটি-র মতো পরপর দু’টি ধাক্কা গভীর প্রভাব ফেলেছিল ভারতীয় অর্থনীতিতে। কানাঘুষো অবশ্য রয়েছে যে, জেটলি এবং সুব্রহ্মণ্যনকে অন্ধকারে রেখেই নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপি শিবিরের প্রশ্ন, পদে থাকাকালীন এই অসন্তোষ নিয়ে কেন মুখ খোলেন না শীর্ষ কর্তারা? উত্তরে বিরোধীদের ব্যাখ্যা, কারণটা হল পদের মর্যাদা বজায় রাখা এবং সরকারের রোষ থেকে বাঁচা। রাজন, সুব্রহ্মণ্যন ও রাওয়তের মন্তব্য উদ্ধৃত করে কংগ্রেস সাংসদ আহমেদ পটেল টুইট করেন, ‘‘বিজেপি সরকারের অধীনে কাজ করা তিন জন সিনিয়র অফিসার সেই কথাটাই বললেন যেটা আমরা বলে আসছিলাম। তা হল— নোটবন্দি এক নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডি। তবু এখনও কোনও ইস্তফা নেই, দায় নেওয়া নেই, ক্ষমা চাওয়া নেই। আছে শুধু ঔদ্ধত্য। ভারত ভুলবেও না, ক্ষমাও করবে না।’’