মকবুল ফিদা হুসেন। ছবি: সংগৃহীত।
নীলচে-ধূসর রঙের বাড়ি। পাশে সাদা রঙের মিনার। সূর্যের আলো পড়লে ঝকমকিয়ে ওঠে দেওয়ালগুলো। কাতারের দোহা শহরের প্রান্তে এমনই একটি ছবির মতো বাড়িতে গড়ে উঠেছে শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের আজীবনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আস্ত একটা জাদুঘর। নাম তার লা ওয়া কালাম। আক্ষরিক অর্থেই ছবির মতো। ২০০৮ সালে হুসেনের আঁকা একটি ছবির আদলে তৈরি সেটি। ভবনের নেপথ্য কারিগর ভারতীয় স্থাপত্যবিদ মার্তণ্ড খোসলা। ভারতীয় কোনও শিল্পীর জন্য বিদেশের মাটিতে একটা গোটা জাদুঘরের ভাবনা সম্ভবত এই প্রথম।
সিনেমা, আলোকচিত্র, স্থাপত্য, ভাস্কর্য— শিল্পের বিভিন্ন আঙ্গিক নেড়েঘেঁটে দেখেছেন হুসেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী হিসেবেই। রং, তুলি, ক্যানভাসের ফ্রেমে আঁকা তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলি শিল্পের বাজারে বিকিয়েছে লক্ষ লক্ষ ডলারে। মননে বিশ্বনাগরিক, স্বভাবে যাযাবর এই শিল্পী জীবনের শেষ কয়েকটা বছর দোহাতেই কাটিয়েছেন। ২০১০ সালে সেখানের নাগরিকত্ব পান তিনি।
কাতার ফাউন্ডেশন এডুকেশন সোসাইটি অ্যান্ড রিসার্চ হাব-এর অধীনে তৈরি জাদুঘরটির দরজা গত সপ্তাহেই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ভবনটি প্রায় ৩ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত। হুসেনের আঁকা ছবি, স্থাপত্য, সিনেমা, আলোকচিত্র— সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি শিল্পকর্ম রয়েছে সেখানে। তাঁর সেই সৃষ্টিগুলির মধ্যে হুসেনের জীবন, শিল্প-ভাবনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। জাদুঘরের সংরক্ষক নুফ মহম্মদ বললেন, ‘‘হুসেন সব সময়ে চাইতেন যে তাঁর কাজ দেখতে এসে দর্শকেরা যেন ঘরের মতো স্বস্তি পান। আমরা এখানে সেই অনুভূতি, আরাম আর আন্তরিকতার ছোঁয়া রাখতেচেষ্টা করেছি।’’
উজ্জ্বল রঙ আর জ্যামিতিক প্যাটার্নে আঁকা তাঁর ছবিগুলিতে রয়েছে কিউবিজমের ভাবনা। অনুরাগীদের কাছে তাই তিনি ‘ভারতের পিকাসো’। দীর্ঘ কর্মজীবনে দুটি সিনেমাও বানিয়েছিলেন হুসেন। সেগুলো সমালোচকদের প্রশংসা কুড়োলেও, বক্স অফিসে সাফল্যেরমুখ দেখেনি।
ব্যক্তিজীবন হোক কিংবা কর্মজীবন— বিতর্ক ছিল হুসেনের চিরকালীন সঙ্গী। হিন্দু দেবদেবীর নগ্ন ছবি এঁকে দেশে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ছিলেন। এক সময়ে তার জেরে অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হন। বিভিন্ন জায়গায় কয়েক বছর কাটিয়ে শেষে থিতু হন কাতারে। হুসেনের ঘনিষ্ঠ কাতারের শিল্পী ইউসেফ আহমেদ জানালেন, জীবনের শেষ কয়েকটা বছর আরব্য সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চায় ডুব দিয়েছিলেন হুসেন। সেখানেই বেশ কয়েকটি বিখ্যাত ছবির জন্ম দিয়েছিল তাঁর শিল্পীসত্ত্বা।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে