সাংবাদিক বৈঠকে সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং অসমের পরিবহণ মন্ত্রী অজিত সিংহ। বুধবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়।
শিলচর পুর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য ২১ কোটি ৩৩ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়ে পড়ে রয়েছে। স্রেফ রাজনৈতিক চাপানউতোরে কাজ শুরু হচ্ছে না। কংগ্রেস সাংসদ এবং রাজ্যের মন্ত্রীর অভিযোগ, চিঠি পেয়েও পুরসভা বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট জমা করছে না। জমা করছে না প্রস্তাবিত ব্যয়বরাদ্দের রিপোর্টও। বিজেপি পুরপ্রধানের বক্তব্য, কেন্দ্রের টাকা। রাজ্য সরকার মাধ্যম মাত্র। ডিপিআর-এস্টিমেটের ভিত্তিতেই মঞ্জুরি এসেছে। এখন রাজ্য সরকার টাকাটা দিয়ে দিলেই হয়।
এই পরিস্থিতিতে বাস্তব পরিস্থিতি হল, টাকা কাজে লাগানোর প্রশ্নে দুই পক্ষ এক বিন্দুতে পৌঁছতে না পারলে, সময় মতো কাজ না হলে টাকাটা ফেরত চলে যাবে। রয়ে যাবে ওই রাজনৈতিক চাপানউতোরই।
শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, তিনি শিলচরের পুরপ্রধান থাকার সময় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে পুর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য টাকা চেয়েছিলেন। সিমেন্ট কংক্রিটের ব্লক বসানোর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেন। এটা মনমোহন সিংহের আমলের কথা। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক তাতে অনুমোদনও দিয়েছিল। কিন্তু মঞ্জুরির আগেই নির্বাচন এসে যাওয়ায় তা আটকে যায়। নরেন্দ্র মোদীর সরকারও তাতে আপত্তি জানায়নি। অনুমোদন মঞ্জুরি পেয়ে গিয়েছে। ২৭ এপ্রিলের সেই মঞ্জুরিপত্র অসম সরকার হাতে পেয়েই শিলচর পুরসভাকে জানিয়েও দিয়েছে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ রাজ্যকে বহন করতে হবে। তরুণ গগৈ সরকার তা মেনে নিয়েছে বলে সুস্মিতা জানান। সুস্মিতার অভিযোগ, ‘‘এক মাসেও বিজেপি পুরপ্রধান প্রয়োজনীয় ডিপিআর-এস্টিমেট পাঠায়নি।’’ ফলে তাঁর আশঙ্কা, ‘‘দৌড়ঝাঁপ করে আদায় করা প্রকল্পের অর্থ না ফেরত যায়।’’
নীহারবাবু চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ডিপিআর-এস্টিমেট না পাঠানোর কথাও সত্য বলেই তিনি জানান। তাঁর বক্তব্য, পুরো ফাইল তিনি ভাল করে পড়েছেন। ডিপিআর-এস্টিমেটের ভিত্তিতেই কেন্দ্র অর্থ মঞ্জুর করেছে। ফলে রাজ্য পুরসভাকে টাকাটা পাঠিয়ে দিলেই ঝামেলা মিটে যায়। এখানে অন্য রাজনীতি চলছে বলেই তাঁর অনুমান। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসিরা আসলে ডিপিআর-এস্টিমেটের কথা বলে কাজটা পূর্ত বিভাগকে দিয়ে করাতে চায়। এতে নিজেদের লোককে ঠিকাদারি পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ ওরা পাবে। অন্য সুবিধেও ভোগ করবে। কিন্তু কেন্দ্রের এই প্রকল্পে কাকে দিয়ে কাজ করানো হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে।’’ তাই তিনি রাজ্যের কাছে ডিপিআর-এস্টিমেট পাঠাতে রাজি নন। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, ‘‘পুর প্রশাসনে নীহারবাবু নতুন। বুঝতে পারছেন না পুরপ্রধানের ইগোর লড়াইয়ে টাকা ফিরে গেলে ক্ষতি হবে শিলচরবাসীরই। রাজ্য নতুন ডিপিআর-এস্টিমেট চাইলে তাঁকে তা দিতেই হবে।’’ শপথ নিয়েই জলকর ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা এবং তা কার্যকর করতে না পারারও সমালোচনা করেন অজিত-সুস্মিতা। তাঁরা বলেন, ‘‘জল সরবরাহ প্লান্টের কী অবস্থা, তা নিয়ে খোঁজ করছেন না। ঘোষণা করলেন জলকর কমাবেন!’’ পুর এলাকার রাস্তায় সিসি ব্লক বসানোর মতো, জল সরবরাহ প্লান্ট আধুনিকীকরণও তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প বলে জানান শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের পদস্থ কর্তাদের বসিয়ে রেখে সুস্মিতা বলেন, এই কাজে তিনিই ২৫ কোটি টাকার মঞ্জুরি আদায় করেন। দরপত্রও ডাকা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পে জলাধারের ক্ষমতা বাড়বে। চারটি ১৮ মিটার উঁচু ওভারহেড ট্যাঙ্ক বসানো হবে তারাপুর, কলেজ রোড, হসপিটাল রোড ও মালুগ্রাম-মধুরাঘাটে। প্রতিটির জল ধারণ ক্ষমতা হবে সাড়ে চার লক্ষ লিটার। প্লান্টের ২৫ কিলোমিটার পরিধিতে যত পাইপলাইন রয়েছে, সব বদলানো হবে। সুস্মিতার কথায়, ‘‘১৯৭৫ সালে প্লান্টটি বসানো হয়েছিল। তারপর সেগুলি আর বদলানো হয়নি।’’