ঔরঙ্গজেব কে, জরুরি অবস্থা কার, তরজা

কংগ্রেসের মতে, মোদী ঔরঙ্গজেবের থেকেও ক্রূর স্বৈরতন্ত্রী বাদশা। ঔরঙ্গজেব বাবাকে বন্দি করে রেখেছিল, মোদী জমানায় অঘোষিত জরুরি অবস্থায় বন্দি দেশের গণতন্ত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:৪৬
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।

দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে— রাহুল গাঁধীর এই অভিযোগের জবাবে ইন্দিরা জমানার জরুরি অবস্থাকে হাতিয়ার করলেন নরেন্দ্র মোদী। বোঝাতে চাইলেন, রাহুলই জরুরি অবস্থার উত্তরাধিকারী। এবং সেই মানসিকতা নিয়েই চলছেন তিনি। ‘‘এ তো ভূতের মুখে রামনাম!’’ হাসছেন কংগ্রেস নেতারা। বলছেন ভোটের বছরে এসে মোদী তুলতে পারছেন না ‘অচ্ছে দিন’-এর কথা। বছরে ২ কোটি রোজগার বা প্রত্যেক দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ারও ধার ঘেঁষছেন না। এখন দলিত-দরদি ভাব দেখাচ্ছেন! মোদী রাহুলকে বলেন ঔরঙ্গজেব। কংগ্রেসের মতে, মোদী ঔরঙ্গজেবের থেকেও ক্রূর স্বৈরতন্ত্রী বাদশা। ঔরঙ্গজেব বাবাকে বন্দি করে রেখেছিল, মোদী জমানায় অঘোষিত জরুরি অবস্থায় বন্দি দেশের গণতন্ত্র।

Advertisement

জরুরি অবস্থার ৪৩ বছরে ‘কালো দিন’ পালন করল বিজেপি। মুম্বইয়ে মোদী। আমদাবাদে অমিত শাহ। আর দেশ জুড়ে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। ইন্দিরা গাঁধীকে টেনে তুলোধোনা করলেন রাহুলকে। মোদীর কটাক্ষ, কুর্সির সঙ্কট হলেই গাঁধী পরিবার বলে দেশে ভয়ের পরিবেশ, আর তারাই নাকি বাঁচাতে পারে। এক সময় প্রচার করত, আরএসএস, জনসঙ্ঘ মুসলমিদের মেরে দেবে। এখন বলছে, দলিতদের মেরে দেবে। ওরা সংবিধানকে ধ্বংস করে এখন বলছে মোদী সংবিধান নষ্ট করছেন। বিচার ব্যবস্থাকেও ভয়ে রাখত ওরা। এখনও দুর্নীতির মামলায় জামিন পেয়ে ভয় দেখাতে ‘ইমপিচ’-এর চেষ্টা করে বিচারপতিকে। জরুরি অবস্থার সমান মানসিকতার জন্যই ৪০০ থেকে ৪৪ আসনে নেমেছে কংগ্রেস। ‘নামদার (রাহুলরা)’ ভাবতেই পারেন না, তাঁদের কেন জামিন নিয়ে ঘুরতে হয়?

কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী ৪৯ মাসের হিসেব না দিয়ে ৪৩ বছর আগের ঘটনা কেন টেনে আনছেন? জরুরি অবস্থা নিয়ে তো তিনি ভোটে জেতেননি। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিতেছেন, তার জবাব কই? এখন বিপদ দেখে দলিতের নাম!

Advertisement

মুম্বইয়ে মোদীর বক্তব্য শেষ হতেই দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী যা যা বলছেন, সব তাঁর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভয়ের পরিবেশ তিনিই তৈরি করেছেন। নিজের গুরু লালকৃষ্ণ আডবাণীকে জোর করে মার্গদর্শক মণ্ডলীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন! টুইটে তিনি যাঁদের ‘ফলো’ করেন, তাঁরা ধমক দেন। এখন তো সুষমা স্বরাজের মতো মন্ত্রীকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মোদী-রাজের জন্যই জনতার দরবারে বিচার চাইতে হয়েছে বিচারপতিদের। সংবাদমাধ্যমকেও চাপে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষ কী খাবে, কী পরবে- সে সবও ঠিক করে দিতে চায় গেরুয়া শিবির। দলিত নিগ্রহ, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে মোদীর আমলেই। এসব অঘোষিত জরুরি অবস্থা ছাড়া আর কী? এই ঔরঙ্গজেবকে ইতিহাসই শিক্ষা দেবে।

ভোটের আগে রাহুলকে বিঁধতে মোদীর এই জরুরি অবস্থা নামের অস্ত্রটি কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয় আছে বিজেপিতেই। দলে অনেকের মতে, ওই ঘটনা আজকের প্রজন্ম দেখেইনি। এ দিয়ে তাদের কাছে টানা যাবে না। উল্টে মোদী জমানার সঙ্গেই জরুরি অবস্থার তুলনা করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে এতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন