জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি) নিয়ে বরাকের বিভিন্ন সংগঠন এক মঞ্চে আসতে চলেছে। আজ শিলচরে ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে এ জন্য দু’ঘণ্টার ধর্নায় বসে ‘বরাক ভ্যালি হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন সোসাইটি’। নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যরাও তাতে সামিল হন।
এন আর সি নিয়ে আন্দোলনের জন্য পৃথক নাগরিক সভা করে সংগঠন দু’টি তৈরি হয়েছিল। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি নামে অন্য একটি সংগঠনও পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করে। তিন সংগঠনের আবেগের জায়গা এক। দাবিও অভিন্ন। এর পরও সমন্বয় ছিল না নিজেদের মধ্যে। বরং কর্মসূচি নিয়ে পারস্পরিক বিরোধিতা প্রকাশ্যে আসছিল। আজ প্রোটেকশন সোসাইটির ধর্নায় যোগ দিয়ে সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক শশাঙ্কশেখর পাল নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের উপর জোর দেন। সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশনের জন্য তাঁদের প্রস্তুতির কথা জানান প্রোটেকশন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নীলাদ্রি রায়।
কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির ডাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ গত কাল গুয়াহাটিতে এক জোট হয়েছেন। কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছিলেন। গত কাল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত তার বিরোধিতা করেন। অন্যান্যদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনিও বলেছিলেন— অসমিয়াদের স্বার্থ সুরক্ষায় সব বিদেশিকে বিতাড়িত করতে হবে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে শশাঙ্কবাবু বলেন, ‘‘বরাকে তাই আমাদের জোট বাঁধতে হবে। একই দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের একমঞ্চে আসতে হবে।’’ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কেউ এ দিনের ধর্নায় যোগ না-দিলেও, তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তার ইঙ্গিত দেন শশাঙ্কবাবু।
প্রোটেকশন সোসাইটির কার্যনির্বাহী সভাপতি আইনজীবী ধ্রুব সাহা আশ্বস্ত করেন, যে মামলার উপর ভিত্তি করে এনআরসি নিয়ে একের পর এক নির্দেশ আসছে, সেই মামলা টিকতে পারে না। তাঁর যুক্তি— অসমিয়া কয়েকটি সংগঠন আদালতে একতরফা ভাবে অনেক অনৈতিক কথা বলেছে। ঠিকঠাক ঐতিহাসিক তথ্য দেওয়া হয়নি। যে মানচিত্র আদালতে পেশ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। এই মামলায় কোনও প্রতিপক্ষ ছিল না। শুধু রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশদের শ্রীহট্ট দখলের পর থেকে ভারতের স্বাধীনতা পর্যন্ত অসম-শ্রীহট্ট যে একই ছিল, আদালতকে তা জানানো হয়নি। ধ্রুববাবুর দাবি, এ বার তাঁরা আবেদন করে ওই মামলায় সামিল হতে চাইবেন। সমস্ত তথ্য নথি-সহ তুলে ধরা হবে। তবে সে জন্য সবাইকে জোটবদ্ধ থাকতে হবে।
নাগরিকপঞ্জীর ভিত্তি তারিখ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ হলেও ১৯৭২ সাল অবধি মেঘালয় অসমেরই অংশ ছিল, সেক্ষেত্রে, ওই সময় অবধি মেঘালয়ে থাকা ও মেঘালয় থেকে অসমে স্থানান্তরিত হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কী নিয়ম অনুসরণ করা হবে এবং তাদের ক্ষেত্রে লিগ্যাসি ডেটা ও প্রামাণ্য নথি হিসাবে কোন কোন শংসাপত্র গ্রহণযোগ্য হবে তা জানতে চেয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার।