মতের বৈচিত্রে ভয় পেলে চলবে না, বললেন কৌশিক

কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘বৈচিত্রময় ভাবনা জরুরি। মেধাবীদের নিজস্ব মত বলতে দিতে হবে জনসমক্ষে।”

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৯
Share:

কৌশিক বসু। ভারতের প্রাক্তন আর্থিক উপদেষ্টা।

বিভাজনের রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদে দেশের ক্ষতি করতে পারে বলে জানালেন অর্থনীতিবিদ তথা ভারতের প্রাক্তন আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু। তাঁর বক্তব্য, যে গণতন্ত্র, বাক্‌স্বাধীনতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদের কাঠামোর ভিত্তিতে ভারত স্বাধীনতা-উত্তরকালে গড়ে উঠেছিল, কার্যত তাতেও ক্ষয় ধরছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ধাক্কা খাচ্ছে বহুমত প্রকাশের স্বাধীনতাও।

Advertisement

কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘বৈচিত্রময় ভাবনা জরুরি। মেধাবীদের নিজস্ব মত বলতে দিতে হবে জনসমক্ষে। যা আপনার মতের বিরুদ্ধেও যেতে পারে। আমরা শক্তিশালী দেশ। মতের বৈচিত্র নিয়ে ভয় পেলে চলবে না। এটা লজ্জার যে, তা করা হচ্ছে। আশা করব, তা হবে না, মানুষের সেই সম্বিত ফিরবে।’’

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব নিয়ে ফিকির আলোচনাচক্রে শুক্রবার দেশের আর্থিক অবস্থা ব্যাখ্যা করছিলেন কৌশিকবাবু। সে প্রসঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক পঞ্জি নিয়ে নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

Advertisement

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরিকাঠামোয় লগ্নির পরিকল্পনার প্রশংসা করলেও গত কয়েক বছরে জিএসটি, নোট বাতিল-সহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জের কী ভাবে দেশের কর্মসংস্থান ও বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে, তা তুলে ধরেন তিনি। তার পরেই বিভাজনের রাজনীতি, সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাসভঙ্গের বাতাবরণের প্রসঙ্গ আসে তাঁর কথায়। কৌশিকবাবুর সতর্কবার্তা, স্বল্প মেয়াদে নানা পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক উন্নয়নের জন্য সেগুলি ক্ষতিকারক।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষার উল্লেখ করে কৌশিকবাবুর দাবি, সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়নে পারস্পরিক বিশ্বাসের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সমাজ যত বেশি সেই বিশ্বাস গড়তে পারে, তারা তত উন্নতি করে। দেখা গিয়েছে, কোনও শ্রমিক নিজেকে সংস্থার অংশীদার মনে করতে পারলে তাঁর কর্মদক্ষতা ৫৬% বাড়ে। কিন্তু তাঁর মতে, ভারতে রাজনৈতিক বিভাজন বেড়ে গিয়েছে। পারস্পরিক বিশ্বাসে বা নিজেকে সমাজের অংশীদার ভাবার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ছে। পরে তিনি জানান, পাকিস্তানের অর্থনীতি প্রথম দিকে ভাল ভাবে শুরু করলেও বিভাজনের রাজনীতি, উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্য তা ধাক্কা খায়। ভারতও কি সে দিকে এগোচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আশা করি, তা হবে না।’’

ভারতের বৈচিত্রের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন কৌশিকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ভারতে নানা ধরনের মানুষ রয়েছেন। সেই বৈচিত্রকে ধরে রাখতে হবে, তবে জোর করে নয়। তাঁরা নিজেরাই মনে করবেন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তাঁরা দেশের অংশীদার। আমি যখন সরকারে কর্মরত ছিলাম, তখন অর্থ মন্ত্রকে যাওয়ার সময় জানতাম না, কার কী ধর্ম, কী জাত। আমাদের সকলের একটাই লক্ষ্য ছিল, এক সঙ্গে সমস্যার সমাধান করা। এখন মনে হচ্ছে, তাতে ক্ষয় ধরেছে।’’

দেশের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাক্‌স্বাধীনতার কাঠামো ধরে রাখার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। কৌশিকবাবুর মতে, দেশের স্বাধীনতার সময়ে এগুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই বুনিয়াদই পরে দেশের আর্থিক উন্নতিতে উৎসাহ জোগায়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দেশ সেই পথে হাঁটার চেষ্টা করেও পরে সামরিক অভ্যুত্থান বা ধর্মীয় আগ্রাসনের জেরে সেই ভিত ধরে রাখতে পারেনি।’’

গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিন্যাস থেকেই বহুমত বা উচ্চশিক্ষার গুরুত্বের কথা উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। আগামী দিনে কৃত্রিম মেধাভিত্তিক প্রযুক্তি যখন বহু কাজ কাড়বে, তখন মেধাবী ও উদ্ভাবনী মননের প্রয়োজন হবে বলে তাঁর মত। সাম্প্রতিককালে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কেন্দ্রীয় সরকার বা কেন্দ্রের শাসক দল। সে প্রসঙ্গ না তুললেও অবশ্য উচ্চশিক্ষা-সহ মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেওয়ার কথা বলেন কৌশিকবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন