রাজনীতিকদের গুরুত্ব দেওয়া নয়, বরং দেশের মানুষের দিকে নজর দেওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমের কাছে আর্জি জানালেন নরেন্দ্র মোদী।
চেন্নাইয়ে একটি তামিল সংবাদপত্রের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে হাজির ছিলেন মোদী। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘অনেক মিডিয়া রাজনীতির খবরে জোর দেয়। কিন্তু রাজনীতিকদের অনেক উপরে হল দেশ। ভারত আজ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে অবদান রয়েছে ১২৫ কোটি মানুষের। সংবাদমাধ্যম যদি মানুষের কথা ও তাদের সাফল্যকে তুলে ধরে, তা হলে আমি খুশি হব।’’ ঘটনা হল, রাজনীতির থেকে দেশকে উপরে তুলে ধরার কথা গত কালও বলেছিলেন মোদী। সেটা ছিল হিমাচলে ভোটের প্রচার। মোদী অভিযোগ করেছিলেন, যশবন্ত রাও চহ্বাণ কমিটি নোট বাতিলের পক্ষে সুপারিশ করলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী দলের স্বার্থের কথা ভেবেই নোট বাতিল নিয়ে পদক্ষেপ করেননি। মোদীর মতে, ইন্দিরা সে দিন দেশের স্বার্থ দেখেননি। তাই তাঁকেই এখন বাধ্য হয়ে নোট বন্দির মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
হঠাৎ নিজেকে দলীয় স্বার্থের উপরে তুলে ধরতে মোদীর এই প্রয়াস নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, অনেকেরই মতে, লোকসভা ভোটের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা সংবাদমাধ্যমে যে সমর্থন পাচ্ছিলেন মোদী, এখন ততটা দেখা যাচ্ছে না। বরং বেশ কিছু দিন ধরে রাহুল গাঁধী যে ভাবে পাল্টা আক্রমণে নেমেছেন, সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তা গুরুত্ব পাচ্ছে। রাজনীতিকদের গুরুত্ব না দিতে মোদীর আর্জির পিছনে এই সবের ছায়া রয়েছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
মোদী বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের উচিত নয় ক্ষমতার অপব্যবহার করা। এটা অপরাধ। আর সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দেশের মানুষের স্বার্থেই হওয়া উচিত। লেখার স্বাধীনতার অর্থ কখনওই ভুল তথ্য দেওয়ার স্বাধীনতা হতে পারে না।’’ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ-সহ একের পর এক যুক্তিবাদীর হত্যা, প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মেরে ফেলার হুমকির পরে সাংবাদিকদের একাংশ দেশজুড়ে ভয়ের বাতাররণ সৃষ্টির অভিযোগ এনেছেন। এ সবের পিছনে হিন্দুত্ববাদী কট্টর সংগঠনগুলির দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে। সেই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমের ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলতে মোদী কী বোঝাতে চান, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মোদীর এ দিনের অনুষ্ঠানে অবশ্য লুকিয়ে ছিল তামিলনাড়ুতে নতুন রাজনীতির ইঙ্গিত। দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্ত হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পাশে। অনেকেই বলছেন, রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁর পা দেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।