(বাঁ দিকে) হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানি। (ডান দিকে) দিল্লির বিস্ফেোরণে অভিযুক্ত চিকিৎসক উমর উন নবি। ছবি: সংগৃহীত।
জম্মু-কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত তথা ‘ডক্টর টেরর মডিউল’-এর অন্যতম সদস্য তথা চিকিৎসক উমর উন নবি। সূত্রের খবর, বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িতদের জেরা করে উমর সম্পর্কে এমনই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
ওই সূত্র এক সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে, উমর নিজেকে ‘টেরর মডিউল’-এর নেতা বলে দাবি করতেন। উমর কেমন ছিলেন, আর এক ধৃত চিকিৎসক তথা তাঁরই সঙ্গী মুজ়াম্মিলকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উমর দলের সদস্যদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না। তবে সকলের কাছে নিজেকে দলের নেতা হিসাবে তুলে ধরতেন। নানা রকম নির্দেশ দিতেন।
ওই সূত্রের খবর, উমর ন’টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ‘টেরর মডিউল’-এর মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত এবং চতুর ছিলেন তিনি। তদন্তকারীদের কাছে এমনই দাবি করেছেন মুজ়াম্মিল। ওই সূত্রের দাবি, মুজ়াম্মিল তদন্তকারীদের কাছে এটাও দাবি করেছেন যে, তাঁরা এমন এক পরমাণু বিশেষজ্ঞের খোঁজ করছিলেন যাঁকে আত্মঘাতী বোমারু হিসাবে কাজে লাগানো হত। সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের কাছে মুজ্জাম্মিল দাবি করেন, উমরের বুদ্ধিমত্তা, তাঁর দক্ষতার কারণে দলের সকলে সমীহ করে চলতেন। শুধু তা-ই নয়, উমর নিজেকে ‘আমির’ বলে সম্বোধন করতেন। সূত্রের দাবি, তদন্তকারীদের মুজ়াম্মিল জানিয়েছেন, উমর সব সময়েই বলতেন ভারতে মুসলিমদের অবস্থা শোচনীয়। তাই এর বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করতে হবে। দলের সকলকে আত্মাহুতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিতেন। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার, ২০২৩ সালে হরিয়ানার মেওয়াট-নুহে্র হিংসা, ২০২৩ সালে গোরক্ষকদের হাতে নাসির, জুনেইদের হত্যার ঘটনা দলের সকলের সামনে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরতেন।
তদন্তকারী এক সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের জন্য যে বোমা গাড়িতে করে দিল্লিতে নিয়ে এসেছিলেন উমর, সেটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই বোমা তৈরি করতে উমর নখপালিশ রিমুভার, গুঁড়ো চিনি ব্যবহার করেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে ‘টেরর মডিউল’-এর সদস্যেরা চেয়েছিলেন হরিয়ানায় যে বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছেন তাঁরা, সেগুলি জম্মু-কাশ্মীরে স্থানান্তরিত করা হোক। সেখানেই বড়সড় নাশকতার ছক ছিল উমরের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কোনও কারণে ভেস্তে যায়। ওই সূত্রের দাবি, দলের সদস্যদের কাছে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির হত্যার ঘটনাও বার বার উল্লেখ করেছিলেন। বুরহানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন বলেও ওই সূত্রের দাবি।
প্রসঙ্গত, বুরহান ছিল সন্ত্রাসের ‘পোস্টারবয়’। ভূস্বর্গ তাকে এই নামেই চিনত। দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা তরুণের দৌলতেই ফের জঙ্গিপনার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছিলেন স্থানীয় যুবকদের একটি বড় অংশ। ২০১৬ সালে সেই দক্ষিণ কাশ্মীরেরই কোকেরনাগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে খতম হয় হিজবুল কমান্ডার বুরহান। ত্রাল এলাকার সম্পন্ন পরিবারের ছেলে ছিল বুরহান। দাদাকে সেনারা মারধর করায় ২০১০ সালে হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দেয় সে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই পোস্ট করত জঙ্গি জীবনের ছবি এবং ভিডিয়ো। ক্রমে এই তরুণ হয়ে ওঠে হিজবুলের প্রচারের নয়া মুখ।