ত্রিপুরার স্বাস্থ্য

স্বাভাবিক প্রসব করাতে অনীহা ডাক্তারদের

রাজ্যে দু’টি মেডিক্যাল কলেজ। একটি সরকারি, অন্যটি বেসরকারি। প্রতি বছর শুধু সরকারি, জি বি পন্থ মেডিক্যাল কলেজে ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। এখনও পর্যন্ত সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ থেকেই রাজ্যের ৫৮৪ জন ছাত্রছাত্রী এমবিবিএস পাশ করে বেরিয়েছেন।

Advertisement

আশিস বসু

আগরতলা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৭
Share:

রাজ্যে দু’টি মেডিক্যাল কলেজ। একটি সরকারি, অন্যটি বেসরকারি। প্রতি বছর শুধু সরকারি, জি বি পন্থ মেডিক্যাল কলেজে ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। এখনও পর্যন্ত সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ থেকেই রাজ্যের ৫৮৪ জন ছাত্রছাত্রী এমবিবিএস পাশ করে বেরিয়েছেন। এই চিকিৎসদের একাংশ রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে চাকরিও করছেন। সেই তাঁদেরই একটি অংশ ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে গর্ভবতী মহিলাদের স্বাভাবিক প্রসব’ করাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে! তাঁদের সেই আত্মবিশ্বাসই নাকি নেই! অথচ কেরল, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাডুতে ডিপ্লোমাধারী নার্সরাই স্বাভাবিক প্রসব করাতে পারেন।

Advertisement

গত কাল সন্ধ্যায় এই সরকারি মেডিক্যাল কলেজটির ১২তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে ত্রিপরার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর উপস্থিতিতেই চিকিৎসকদের এই ‘খামতি’র কথা প্রকাশ্যে আনেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রধানসচিব এম নাগারাজু। প্রধানসচিবের ব্যাখ্যা বা তথ্য যে কার্যত এ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ‘গুণমান’-কেই কাঠগড়ায় তুলেছে, তা বলাই বাহুল্য। সে কথা স্বীকারও করেন জি বি পন্থ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের একাংশ। স্বীকার করছেন ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিক্যাল কলেজের এক অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর বলেন, ‘‘যে মেডিক্যাল কলেজে অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসররা, প্রোফেসররা ‘রাউন্ড দ্য ক্লক’ সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকেন, তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন কখন?’’ তাঁদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে কলেজের শিক্ষকদের বাইরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয় না, কোনও সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে চাইলে স্বাস্থ্য দফতরের আমলা-কর্তারা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজের ওটি বা আউটডোর সামলাবে কে?’’ তা ছাড়া, মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের কম বেতন তাঁকে ‘প্র্যাকটিস’ করতে বাধ্য করে। সব মিলিয়ে অবহেলিত হয় পড়ানোর কাজটাই। স্বভাবতই সেই মেডিক্যাল কলেজ থেকে যাঁরা এমবিবিএস পাশ করে বেরোচ্ছেন, তাঁদের তাত্ত্বিক ও ফলিত জ্ঞানের সামঞ্জস্যের অভাব রয়ে যাচ্ছে। ফলে চিড় ধরছে আত্মবিশ্বাসে। স্বাভাবিক প্রসব করানোর ‘ঝুঁকি’ নিতেও তাঁরা ভয় পাচ্ছেন বলে চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ।

Advertisement

জি বি পন্থ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কমলকৃষ্ণ কুন্ডু অবশ্য কলেজে শিক্ষার গুণমানে কোনও ঘাটতি নেই বলে পাল্টা আঙুল তুলেছেন স্বাস্থ্য দফতরের আমলাদের দিকেই, ‘‘রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যে পরিকাঠামো থাকার কথা তা নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এর ফলেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে।’’ কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান, অনুপ সাহার বক্তব্য অবশ্য অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নৈতিক অবস্থানটাও এ ক্ষেত্রে বিচার্য। চিকিৎসকের অনীহার প্রশ্নটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’ স্বাভাবিক প্রসবের বদলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের প্রতি দুর্বলতা কী কারণে বাড়ছে, সে বিষয়েও নজর দেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যেখানে স্বাভাবিক প্রসব করানো সম্ভব, সেখানে কেন অস্ত্রোপচারের প্রতি ঝুঁকব? এই নৈতিক দুর্বলতা কেন চিকিৎসকদের তৈরি হবে?’’ এই বিতর্কের মাঝে পড়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী অবশ্য রাজনীতিকের মতোই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির চিকিৎসকদের আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আশা করছি, তখন এ সমস্যা থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন