নয়ডার সেক্টর ৬১-র বলাকার পুজোয় তৈরি হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
সৃজনের সঙ্গে ভক্তি। সমাজসেবার সঙ্গে সাবেক বাঙালিয়ানা। মিলেমিশে জমে উঠছে রাজধানীর দুর্গাপুজোর আসর। প্রবাসীর অতীতচারিতা নয়, পুজোর পাঁচ দিন দশপ্রহরণধারিণীর বন্দনা দিল্লির বহুভাষী সংস্কৃতির সঙ্গে ক্রমশ মিশে গিয়েছে নিজের দাপটেই।
কোথাও কেদারনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি প্যান্ডেলে পূজিত হবেন দুর্গা। আবার কোথাও স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ শহরের বিখ্যাত সিবেলস প্যালেসের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে মন্দির। কোথাও ভোগ সাজানো হচ্ছে তিন রকমের বাঙালি চাটনির উপাচারে! কোথাও বেদি তৈরি হচ্ছে বাংলার রাজবাড়ি দালানের মতো করে। রয়েছে কাশ্মীরি গেট, মিন্টো রোড কালীবাড়ি, করোলবাগের মতো সুপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী পুজো। আবার দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডা, বৈশালীতে ছড়িয়ে রয়েছে নতুনপ্রজন্মের দুর্গাপুজো।
তবে দিল্লির কোনও বড় জনপদের গোটাটাই যদি পুজোর মুখে বদলে যায়, তা হলে তা নিঃসন্দেহে বাঙালিদের সনাতন ঠেক সি আর পার্ক। যেখানে প্যান্ডেল থেকে গড়িয়ে নামে উৎসব, রাস্তাতেও। ৫০ বছরে পা দেওয়া বি ব্লকের চিত্তরঞ্জন পার্ক দুর্গাপুজো সমিতি, পকেট ৪০-এর নবপল্লি পুজো সমিতি, পকেট ৫২-এর দক্ষিণ পল্লি দুর্গাপুজো সমিতি, চিত্তরঞ্জন পার্কের কালীবাড়ির পুজো— প্রত্যেকেই নিজ নিজ গুণে স্বপ্রভ। ডাকের সাজের বনেদিয়ানা, কলকাতা থেকে আসা ঢাকিদের তুমুল বাদ্য, মোগলাই থেকে কবিরাজির হরেক সম্ভার, আরতি নাচ— সব মিলিয়ে প্যান্ডেলের দমবন্ধ ভিড়ে হঠাৎ মনে হয়, আপনি কলকাতায় দাঁড়িয়ে আছেনসপ্তমীর সন্ধ্যায়!
কেদারনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ এ বার করোলবাগের পুজোর। যা পা রাখতে চলেছে ৮৪তম বছরে। তিমারপুর, কাশ্মীরী গেট, মিন্টো রোডের পর দিল্লির প্রাচীনতম পুজো মধ্য দিল্লির এই পুজো। করোলবাগ এলাকা জুড়ে স্বর্ণ ঝলকানি গহনার দোকানে। যা মূলত বাঙালি অধ্যুষিত। মণ্ডপ তৈরি করতে শিল্পীরা এসেছেন ডায়মন্ড হারবার, মেদিনীপুর থেকে। পুরোহিত, ঢাকিরাও বাংলার। পুজো সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীপক ভৌমিকের কথায়, “আমাদের পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল এখানে ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত, সামাজিক প্রতিষ্ঠার কোনও ভেদাভেদ থাকে না।”
প্যাটেল নগর পুজো সমিতির এ বার হীরকজয়ন্তী বর্ষ। কমিটির সভাপতি দেবাশিস ভৌমিক জানাচ্ছেন, আগে যাঁরা এই পুজোয় যুক্ত ছিলেন, এখন বিদেশে, তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে হীরক জয়ন্তীর উদ্যাপনে। প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই আসছেন। পুজোর ভোগ বিশেষ যত্ন নিয়ে বাঙালিয়ানায় সাজানো হয়েছে। উদাহরণ তিন রকমের চাটনি— টোম্যাটো-খেজুর, কাঁচা আম, টোম্যাটো-আমসত্ত্ব। কমিটির সংস্কৃতিক আহ্বায়ক শেলী ভৌমিক জানালেন এই বছর এলাকার যাঁরা ২৫ বা ৫০ বা ৭৫-এ পা দিয়েছেন তাঁদের জন্য কেক কাটা হবে মণ্ডপে।
নয়ডা সেক্টর ৬১-র বলাকা দুর্গোৎসবের এ বারের থিম— এক টুকরো ইউরোপ। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ শহরের বিখ্যাত সিবেলস প্যালেসের অনুকরণে। ৭০ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট চওড়া মণ্ডপে সপরিবার দুর্গা মূর্তিতে পাওয়া যাবে গ্রিক স্থাপত্যের ছোঁয়া। মণ্ডপের আলোকসজ্জা চন্দননগরের শিল্পীদের। ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও ইউরোপীয় শিল্পের এক মিশেল।
বৈশালী সেক্টর ৩-এর সর্বজনীন শ্রী শ্রী কালীপুজো সমিতির পুজোর থিম- ‘মা’, অর্থাৎ জগজ্জননী। উত্তরপ্রদেশের বৃদ্ধাশ্রম থেকে কয়েক জন মা-কে যত্ন করে নিয়ে আসা হবে মণ্ডপে। বিশেষ আসনে তাঁদের বসানো হবে। তাঁরা পুজো দেবেন, সাংস্কৃতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেদের কথা মন খুলে বলার সুযোগ পাবেন। ওই বৃদ্ধাশ্রমগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে পুজো কমিটির পক্ষ থেকে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে