অবাধে ঘুরছেন ললিত, ইডি সেই তিমিরেই

ললিত মোদীকে সাহায্য করার অভিযোগে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে বিরোধীরা। কিন্তু ললিত মোদীকে কাঠগড়ায় তুলতে গিয়ে বিশ বাঁও জলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। একে তো ললিত সেই ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ব্রিটেনে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

ললিত মোদীকে সাহায্য করার অভিযোগে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে বিরোধীরা। কিন্তু ললিত মোদীকে কাঠগড়ায় তুলতে গিয়ে বিশ বাঁও জলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। একে তো ললিত সেই ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ব্রিটেনে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছেন। বহু চেষ্টাতেও তাঁকে ঠিক মতো জেরা করতে পারেননি ইডি-র আধিকারিকেরা। ফলে ললিতের বিরুদ্ধে তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করে উঠতে পারেননি তাঁরা। তার উপরে দিল্লি হাইকোর্টেও ধাক্কা খেয়েছে ইডি। ইডি-র আবেদনের ভিত্তিতেই ললিতের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর অগস্টে তাঁর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

২০১০-এ আইপিএলে ৪২৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে আইপিএল-চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হয় ললিত মোদীকে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এক গুচ্ছ আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করে ইডি এবং আয়কর দফতর। সে বছরই অক্টোবরে দেশ ছাড়েন ললিত। তার পর থেকে গত পাঁচ বছরে আর তাঁর নাগাল পাননি এ দেশের তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, ললিতের বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা আইনে মামলা ঝুলছে। তাঁকে একাধিক বার শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়েছে। সেই সব নোটিসের জবাব তিনি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আসল প্রশ্নই এড়িয়ে গিয়েছেন বলে দাবি ইডি কর্তাদের। সেই কারণে ললিতকে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মানেননি প্রাক্তন আইপিএল কর্তা। ললিতকে জেরা করতে না পারার ফলে অনেক তথ্যই অধরা রয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ইডি-র এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘আইপিএল কেলেঙ্কারিতে আমরা ললিত মোদীকে জেরা করতে চাই। কিন্তু ওঁকে গ্রেফতার করে জেলবন্দি করে রাখার জন্য আরও তথ্যপ্রমাণ দরকার।’’

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়ে ললিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার চেষ্টা করেছিল ইডি। কিন্তু আইনি বাধার যুক্তি দেখিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসন সেই ছাড়পত্র দেয়নি বলে ইডি সূত্রের খবর। ইডি-র তরফে জানানো হয়েছিল, ললিতের বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের মামলা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনুমতি মেলেনি। এমনকী, তাঁর বিষয়ে অন্য কোনও বিশদ তথ্যও পাওয়া যায়নি। সেখানেও আইনি বাধা রয়েছে বলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, দাবি ইডি সূত্রের।

Advertisement

ললিতকে বহু বার সমন পাঠিয়ে লাভ না হওয়ায় ইডি-র আবেদনে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেন ললিত। তিনি দোষী প্রমাণিত হননি— এই যুক্তিতে গত বছর অগস্টে দিল্লি হাইকোর্ট তাঁর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মোদী সরকার কেন শীর্ষ আদালতে আবেদন করল না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।

ললিত মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী?

ইডি-র কর্তাদের বক্তব্য, মূল অভিযোগ বিদেশে কালো টাকা গচ্ছিত রাখা। ২০০৯-এ বিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গ্রুপ-কে আইপিএলের ১০ বছরের প্রচারের জন্য স্বত্বাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। মোট চুক্তিমূল্য ছিল ৪,৭৯২ কোটি টাকা। কিন্তু এর পর মাল্টি স্ক্রিন মিডিয়া (এমএসএম) নামে অন্য একটি সংস্থাকে স্বত্বাধিকার দেয় বিসিসিআই-ই। স্বত্বাধিকারের হাত বদলের জন্য ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গ্রুপকে ৪২৫ কোটি টাকা দেয় এমএসএম।

কিন্তু ইডি-র অভিযোগ, সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে বিসিসিআই এবং ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গ্রুপের মধ্যে কোনও চুক্তিই হয়নি। ফলে তার হস্তান্তরের জন্য এমএসএম-এর কোনও টাকা দেওয়ারই কথা নয়। ইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০০৯-এর জুন মাস পর্যন্ত এমএসএম কয়েক কিস্তিতে মোট ১২৫ কোটি টাকা ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গ্রুপকে দিয়েছিল। যার পুরোটাই আসলে ললিত মোদীর বিদেশি ব্যাঙ্কের বেনামী অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড বা কেম্যান আইল্যান্ডের মতো কর ফাঁকি দেওয়ার স্বর্গরাজ্যে ললিতের বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। সেই সব সংস্থায় ওই টাকা ঢুকেছে বলেই ইডি-র তদন্তকারীদের ধারণা।

এখানেই শেষ নয়। ২০০৮-এ আইপিএলের প্রথম টিম নিলামের সময় ললিত গোপনে অন্য সংস্থার নথিপত্র খুলে একটি সংস্থাকে কত দর দিতে হবে তা আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কি না, তারও তদন্ত করছে ইডি এবং আয়কর দফতর। ২০০৯-এ দক্ষিণ আফ্রিকায় আইপিএলের আসর বসেছিল। সে সময় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি ছাড়াই ললিত প্রায় ৫ কোটি ডলার বিদেশে পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও আইপিএলের আরও এক গুচ্ছ দুর্নীতির তদন্ত করছে ইডি ও আয়কর দফতর। কিন্তু সেই তদন্তের জাল কবে গোটানো সম্ভব হবে, তদন্তকারীদের কাছেও সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন