বিক্ষোভ বাংলাদেশে। — ফাইল চিত্র।
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু পরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে তাণ্ডবলীলা চলছে, তা এক কথায় বেনজির। এই ভাবে সংবাদমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক সংস্থায় হামলা চালানোর ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। তবে রাজনৈতিক শিবিরে একটা বড় অংশের মতে, এই হামলা সুপরিকল্পিত এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুনিপুণ কৌশল।
২০২৪ সালের ৫ অগস্টের পরে বাংলাদেশে গঠিত অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের চালিকাশক্তি জামায়াতে ইসলামী এবং পাকিস্তান বলে অভিযোগ করে থাকেন অনেকেই। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই রকম অশান্তি যে ঘটতে পারে, জামাত এবং কট্টরপন্থীরা তার সলতে পাকাচ্ছিল অনেক দিন থেকেই। ওসমান হাদি হত্যা তাদের কাছে সেই সুযোগ এনে দিল। এই অশান্তির মূল লক্ষ্য ভারত-বিরোধিতার জিগিরকে তুঙ্গ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
গত নভেম্বরে ভারতে এসেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বৈঠক করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। খলিলুরের ভারত সফরের আগেই মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনা এবং তাঁর আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা তার পরেই আওয়াজ তুলতে থাকে, অবিলম্বে হাসিনাকে ফেরত পাঠাক নয়াদিল্লি। এই দাবিতে বাংলাদেশে হাওয়া গরম করা শুরু হয়। কিন্তু খলিলুরের ভারত সফরের পরে স্পষ্ট হয়ে যায়, হাসিনাকে ফেরানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই।
এর পরে নতুন দাবি উঠতে শুরু করে। তাতে ইন্ধন জোগাল ইউনূস সরকার। অন্তর্বর্তিকালীন সরকার ২০০৯ সালের পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন বিডিআর-এর প্রাক্তন ডিজি এ এল এম ফজলুর রহমান। অভিযোগ করা হয়, বিডিআর বিদ্রোহে ভারতের ভূমিকা রয়েছে এবং তাতে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, তা স্রেফ ভারত-বিরোধী জিগির তোলার জন্য। এটা জলের মতো স্পষ্ট ছিল। কারণ, ওই ঘটনার তদন্ত আগেই হয়ে গিয়েছিল। এত বছর বাদে নতুন করে আর প্রমাণ করার কিছু নেই।’’
হাদি-হত্যার পরেও সেই একই তত্ত্ব। অভিযোগ তোলা হয়, হাদিকে খুন করেছে ছাত্র লীগের লোক। সে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তাকে না-ফেরানো পর্যন্ত বাংলাদেশে হাই কমিশন খুলতে দেওয়া হবে না— হুমকি দিয়েছিলেন এক এনসিপি নেতা। ওই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘এটাও একটা ‘মেটিকুলাস ডিজ়াইন’। রাজপথ মৌলবাদীরা দখলে রাখবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজপথ একটা বড় বিষয়। যে তার দখল রাখতে পারবে, এগিয়েথাকবে সে-ই।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউনূস সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে জামাত। তারা ভেবেছিল, আওয়ামী লীগ ভোট-রাজনীতির বাইরে। খালেদা জিয়া শয্যাশায়ী, তারেক বাইরে। ফলে বিএনপি ছত্রভঙ্গ। এই সুযোগে জামাত এবং কট্টরপন্থীরা কাজ হাসিল করবে। কিন্তু তারেকের দেশে ফেরার ঘোষণা তাদের পরিকল্পনায় বাদ সাধে। কারণ, তারেক ফিরলে উজ্জীবিত হবে বিএনপি। তারেক মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধীদের নিশানা করে স্বাধীনতার সমর্থকদের বার্তা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ না থাকলে সেই ভোটব্যাঙ্ক বিএনপির ঝুলিতে টানার চেষ্টা হবে।
গোটা ঘটনার জন্য ইউনূসকেই কাঠগড়ায় তুলছেন বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘হাদির মৃত্যুর পরে যা হল, তা পুরোপুরি পরিকল্পিত। আর গোটা ঘটনাটাই ঘটল ইউনূস নেতৃত্বে থাকাকালীন। সন্ত্রাস, অরাজকতা তৈরি করে কী ভাবে সরকারে টিঁকে থাকা যায়, তার নতুন এক পন্থা দেখাচ্ছেন ইউনূস।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অশান্তির আগুন কত দিন জ্বলবে আর কতটা ছড়াবে, তার উপরেই হয়তো নির্ভর করবে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে