প্রথমে মুম্বইয়ের আন্তোনিও ডি’সুজা স্কুল, পরে পুণের ভারতীয় বিদ্যাপীঠের মোটের উপরে মেধাবী ছাত্র। তারও পরে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম কর্ণধার। আব্দুল সুভান কুরেশির মতো শিক্ষিত মুসলিম যুবকের জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়া ভারত সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মেনে নিচ্ছেন গোয়েন্দারাই।
পুণের ভারতীয় বিদ্যাপীঠ থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেকট্রনিকসে ডিপ্লোমা করার পরে একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করত সুভান। আদতে উত্তরপ্রদেশের রামপুরের বাসিন্দা সুভানের পরিবারের সদস্যেরাও শিক্ষিত। পুলিশের একটি অংশের মতে, কম কথা বলা, প্রযুক্তিবিদ্যায় দড় সুভানের মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন সিমি-তে যোগদানের পিছনে হাত ছিল সাদিক ইসরার। সাদিক ছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৯৮ সালে সুভান সিমি-তে যোগ দেয়। পরে জড়িয়ে পড়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গে।
২০০৮ সালে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের হাতে সিমি ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পাণ্ডা সফদর নাগোরির গ্রেফতারির পরে জঙ্গি সংগঠনের দায়িত্ব হাতে পায় সুভান। প্রথম দিকে পুলিশের কাছ থেকে সাফল্যের সঙ্গে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় সে।
প্রাথমিক প্রস্তুতির পরে ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। সেই বিস্ফোরণের পরে দায় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে ই-মেল পাঠাত সংগঠনটি। পুলিশি তদন্তে সেই সময়ে প্রথম সুভানের নাম সামনে উঠে আসে।
পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, প্রযুক্তিবিদ ওই শিক্ষিত জঙ্গি গোটা দেশ ঘুরে হামলার লক্ষ্য ও দল নির্বাচন, বিস্ফোরক জোগাড়-সব একাই করেছে।
তখন তদন্তকারীরা ভেবেছিলেন, সংবাদমাধ্যমকে ই-মেলও করত সুভানই। কিন্তু ২০০৮ সালেই মুম্বই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আর এক প্রযুক্তিবিদ জঙ্গি মহম্মদ আসগর পীরভয়। জানা যায় সুভান নয়, পুণেতে ইয়াহু-র দফতরে কাজ করা পীরভয়ের উপরে দায়িত্ব ছিল হামলার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে ই-মেল করার।
আসগরের গ্রেফতারির পরে নেপালে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সুভান। তাকে পালাতে সাহায্য করে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তাদের মদতে নেপালে গিয়ে সেখানে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স বের করে গাড়ির ব্যবসা শুরু করে সুভান।
এ দিকে সুভান যে নেপালে ঘাঁটি গেড়েছে সে বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দারা প্রথম জানতে পারেন ২০১০ সালে। গুজরাত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সুভানের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হাসিব রাজা। তার কাছ থেকেই সুভানের খবর মেলে। অভিযানে নামে বিশেষ বাহিনী। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দারা পৌঁছনোর দশ মিনিট আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যায় সুভান।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, এরপর একেবারেই ডুব দেয় সুভান। এমনকী মুম্বইয়ের মীরা রোডে নিজের মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে। ২০১৫ সালে সুভানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনেক আর এক প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজ ভটকল। সেই সময়ে নিজের পরিচয় গোপন করে নেপালে শিক্ষকের কাজ করছিল সুভান। আইএসআইয়ের মধ্যস্থতায় দুই জঙ্গির বৈঠকে ভেঙে যাওয়া মুজাহিদিনকে চাঙ্গা করার জন্য সুভানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনা তৈরি, প্রশিক্ষণ ও ভারতে স্লিপার সেল কোথায় রয়েছে তা জানতে নেপাল থেকে একাধিক বার সৌদি আরবও যায় সুভান। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ভারতে ঢোকে সে। তার প্রাথমিক কাজ ছিল এ দেশের বিভিন্ন স্লিপার সেলগুলিকে চাঙ্গা করে নতুন যুবকদের জঙ্গি কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করা। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, গত তিন মাস ধরেই নজর রাখা হচ্ছিল সুভানের উপরে। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।