(বাঁ দিক থেকে) জেপি নড্ডা, একনাথ শিন্দে, দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রে শাসকজোটে অসন্তোষের ছায়া। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অমিত শাহ এবং জেপি নড্ডাকে নালিশ জানিয়ে এলেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্দে।
বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে বৈঠকে করেন শিন্দে। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ শিবসেনার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, স্থানীয় স্তরের বিজেপি নেতারা যে ভাবে শিবসেনা নেতাদের ভাঙিয়ে নিচ্ছেন, তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন শিন্দে। বিষয়টি জোটধর্মের বিরোধী বলেও শাহ-নড্ডাদের স্মরণ করিয়ে দেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী।
মহারাষ্ট্রে পুরসভা স্তরের নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র চ্যবন স্থানীয় শিবসেনা নেতাদের পদ্মশিবিরে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। শিবসেনার ওই সূত্রের দাবি, বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সরব হন শিন্দে। তবে এই বৈঠক নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি বিজেপি কিংবা শিবসেনার কোনও নেতা।
মহারাষ্ট্রের শাসকজোট ‘মহাজুটি’তে বিজেপি, অজিত পওয়ারের এনসিপি ছাড়াও রয়েছে শিন্দের শিবসেনা। গত কয়েক দিন ধরেই জোটের অন্দরে অসন্তোষের ইঙ্গিত মিলছিল। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের ডাকা মন্ত্রিসভার বৈঠকে গরহাজির ছিলেন শিবসেনার মন্ত্রীরা। তবে উপমুখ্যমন্ত্রী শিন্দে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এখানেই শেষ নয়, বুধবার মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফডণবীস এবং মহারাষ্ট্রের আর এক উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত। আমন্ত্রিত হলেও ওই অনুষ্ঠানে যাননি শিন্দে।
স্থানীয় শিবসেনা নেতাদের বিজেপিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আগেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন শিবসেনার মন্ত্রীরা। এই বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। শিবসেনার অভিযোগ, বিজেপি কল্যাণ এবং ডম্বিভলি এলাকায় শিবসেনাকে ভাঙার চেষ্টা করছে। এই এলাকার সাংসদ শিন্দের পুত্র শ্রীকান্ত। বিষয়টি নিয়ে তাই শিবসেনাও যথেষ্ট স্পর্শকাতর। বিজেপির পাল্টা দাবি, উল্লাসনগর এলাকায় শিবসেনাই তাঁদের ঘর ভাঙাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও ঘটনার নাম না-করলেও মঙ্গলবার ফডণবীস বলেন, “সকলের জোটধর্ম মেনে চলা উচিত এবং শরিক দল থেকে নেতা ভাঙানো উচিত নয়।” এ বার বিজেপির বিরুদ্ধেই জোটধর্ম না-মানার অভিযোগ তুলে শাহদের কাছে নালিশ ঠুকলেন শিন্দে।
ভারতে জোট রাজনীতির ইতিহাসে শরিক দলগুলির মধ্যে এই ধরনের চাপানউতর অবশ্য নতুন নয়। ২০১৭ সালে আরজেডি-র হাত ছেড়ে নীতীশ যখন বিজেপির হাত ধরেছিলেন, তখন লালুর দলের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। ২০২২ সালে তিনি যখন ফের আরজেডি-র হাত ধরেন, তখন নীতীশের এই অভিযোগের অভিমুখ ছিল বিজেপির দিকে। মহারাষ্ট্রে অবশ্য দল ভাঙাভাঙির ঘটনা নতুন নয়। শিন্দে নিজেই অবিভক্ত শিবসেনা ভেঙে অনুগত সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে আলাদা দল গড়েন। ফলে ভেঙে যায় উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, কংগ্রেস, এনসিপি (অবিভক্ত)-র সরকার। তার পরের বছরেই কাকা শরদ পওয়ারের দল ভাঙান ভাইপো অজিত। ‘মহাজুটি’ সরকারে যোগ দিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হন তিনি।