নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। — ফাইল চিত্র।
এ বার দুই দফায় নির্বাচন হবে বিহারে। প্রথম দফার নির্বাচন হবে নভেম্বরের ৬ তারিখ। প্রথমে ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ১০ অক্টোবর সেই সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। তা যাচাইয়ের জন্য ১৮ তারিখ অবধি সময় পাওয়া যাবে। প্রার্থীরা নাম প্রত্যাহার করতে পারবেন ২০ অক্টোবর পর্যন্ত।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ১১ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ১২২টি বিধানসভা কেন্দ্রে। গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে ১৩ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রার্থীরা চাইলে নাম তুলে নিতে পারবেন।
জ্ঞানেশ জানিয়েছেন, বিহার নির্বাচনের পাশাপাশি আগামী ১১ নভেম্বর সাতটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (জম্মু ও কাশ্মীর, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, মিজ়োরাম, পঞ্জাব, তেলঙ্গানা এবং রাজস্থান) আটটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে। সেগুলিরও ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সকল ভোটারকে ভোটার তালিকায় নিজের নাম রয়েছে কি না দেখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যদি কারও নাম তালিকায় না থাকে, তা হলে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য এখনও বিএলও-দের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ১০ দিন আগে পর্যন্তও ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত করা যাবে।
যে কোনও প্রয়োজনে ভোটার হেল্পলাইন নম্বর ১৯৫০-এ ফোন করা যাবে।
জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘বিহার নির্বাচন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। তাই আসন্ন নির্বাচনের জন্য বিহারে মোট ৮.৫ লক্ষ আধিকারিককে নিযুক্ত করা হয়েছে।’’
ভোটারদের মোবাইল ফোন জমা রাখার জন্য ভোটকেন্দ্রের বাইরে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা থাকবে। সারি যাতে দীর্ঘ না হয় সে দিকে নজর রাখা এবং ভিড়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিটি বুথে সর্বাধিক ১,২০০ জন ভোটার ভোট দিতে পারবেন।
বিহারে দু’দফায় বিধানসভা ভোট হবে। ৬ আর ১১ নভেম্বর। ফলঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর।
জ্ঞানেশ বলেন, এসআইআর প্রক্রিয়ায় দেশকে পথ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন ভোটারদের কিংবা নতুন ঠিকানাধারী ব্যক্তিদের নতুন ভোটার কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জ্ঞানেশ। এত দিন এই প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি সময় লাগত। কিন্তু এ বার মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই নতুন ভোটার কার্ড দেওয়া হয়েছে।
জ্ঞানেশ বলেন, আসন্ন বিহার নির্বাচনে ১৪,০০০ ভোটারের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। তাঁরা যাতে ভোট দিতে পারেন সে জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করা হবে।
কেউ সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘২৫০টি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ টহল চলবে। টহলের জন্য ঘোড়া থাকবে। সমস্ত কেন্দ্রে ডেস্ক, র্যাম্প এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের জন্য বাড়িতে ভোট দেওয়ার সুবিধা থাকবে।’’
বিহারে ভোট দেওয়ার যোগ্য ৭.২৪ কোটি ভোটার রয়েছেন। গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ৯০,০০০-এরও বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১,০৪৪টি কেন্দ্র পরিচালনা করবেন মহিলারা। সুষ্ঠু ভাবে নজরদারি নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত ভোটকেন্দ্রে ‘ওয়েব-কাস্টিং’ করা হবে।
জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘এ বারের নির্বাচন কেবল জনগণের জন্য সহজই হবে না, বরং শান্তি ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’’
জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছিল। ১ অগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলকে তা দেওয়া হয়েছিল। তার পর সকলকে দাবি এবং আপত্তির জানানোর জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এখনও চাইলে তাতে কোনও দাবি জানানো বা নাম যুক্ত করা যাবে।’’
এসআইআর প্রসঙ্গে জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘এই অনুশীলনের মাধ্যমে ২২ বছর পর ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ হয়েছে। আমাদের ২৪৩টি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটিতে একজন করে নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা রয়েছেন।’’
জ্ঞানেশ ছাড়াও সাংবাদিক বৈঠকে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিংহ সান্ধু এবং বিবেক যোশী। শুরুতেই ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা (স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) সম্পর্কে প্রশংসা শোনা গিয়েছে জ্ঞানেশের মুখে।প্রসঙ্গত, ভোটের আগেই বিহারে ভোটার তালিকার এই বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা করেছে কমিশন। প্রায় সাড়ে ৬৮ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে নাম যোগ করা হয়েছে ২১ লক্ষের।
বিকেল ৪টের সময় শুরু হল সাংবাদিক বৈঠক। নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানালেন, এই সাংবাদিক বৈঠকেই বিহারের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট জানানো হবে। তা ছাড়া, সামগ্রিক ভাবে ভোটপ্রক্রিয়ায় ১৭টি নতুন পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যা বিহার থেকে শুরু হবে।
বিহারের বিধানসভার আসনসংখ্যা ২৪৩। আগামী ২২ নভেম্বর বর্তমান আইনসভার মেয়াদ শেষ হবে। তার আগে অক্টোবরের শেষে রয়েছে ছটপুজো। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চাইছে, ছটের পরপরই নির্বাচনের আয়োজন করা হোক। কারণ, যাঁরা বাইরে থাকেন, ছটপুজো উপলক্ষে তাঁদের অনেকেই বিহারে ফেরেন। এই সময় ভোট হলে তাঁরাও ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ফলে ভোটের হার বাড়বে।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে করোনা অতিমারির আবহে বিহারে তিন দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। ফলে কত দফায় নির্বাচন ঘোষণা করা হয়, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে।