অসমে কেন এসআইআর হবে না, দু’টি কারণ ব্যাখ্যা করল নির্বাচন কমিশন। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই আগামী বছর অসমেও বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু সেই রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) ঘোষণা করল না নির্বাচন কমিশন। তারা আগেই জানিয়েছিল, বিশেষ করে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে এমন রাজ্যগুলিতে ওই সংশোধনের কাজ প্রথমে শুরু হবে। তার পরেও কেন অসমের জন্য এসআইআর করার কথা ঘোষণা করল না কমিশন? প্রশ্ন উঠতেই তার ব্যাখ্যা দিল তারা।
সোমবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এসআইআরের কথা ঘোষণা করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। তিনি জানান, দ্বিতীয় দফায় দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর হবে। কোন কোন রাজ্যে এসআইআর হবে, সেই তালিকাও প্রকাশ করে কমিশন। সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, গুজরাত, কেরল, লক্ষদ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, আন্দামান নিকোবর। এই ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল এবং পুদুচেরিতে আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন। এই চার রাজ্যের সঙ্গে ভোট আছে অসমেও। তবে কেন অসমে এসআইআর হবে না?
অসমে কেন এসআইআর করা হচ্ছে না, সাংবাদিকদের প্রশ্নে কারণ ব্যাখ্যা করেন জ্ঞানেশ। তিনি জানান, ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে অসম রাজ্যের জন্য আলাদা ধারা রয়েছে। এ ছাড়াও আরও একটি কারণের কথা জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে অসমে নাগরিকত্বের যাচাইকরণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর গোটা দেশের জন্য এসআইআর সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি যেহেতু ২৪ জুন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই কারণে অসমে তা প্রযোজ্য নয়।’’ জ্ঞানেশ জানান, অসমের জন্য আলাদা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তবে কবে সেই বিজ্ঞপ্তি জারি, কবে অসমে এসআইআর হবে— তা স্পষ্ট করেনি কমিশন।
প্রসঙ্গত, কেবলমাত্র অসম রাজ্যের জন্যই নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারাটি তৈরি করা হয়েছিল। অসমে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরে ১৯৮৫-তে ভারত সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া ‘অসম চুক্তি’-র অঙ্গ হিসাবে নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারা তৈরি করা হয়েছিল। সোমবার কমিশন সেই ধারার কথাই উল্লেখ করে।
যদিও এই ধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মামলাও হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তবে দেশের শীর্ষ আদালত ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ওই ধারার সাংবিধানিক বৈধতা মেনে নেয়। ওই ধারা অনুযায়ী ১৯৬৬-র ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসমে অনুপ্রবেশ করা বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। সেই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে অসমে। কমিশন জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।