সলমন খান একা নন। রাজনৈতিক নেতা-সহ প্রায় তিনশো জন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিও ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিরুদ্ধে একজোট হলেন। রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষর করে মেমনের ফাঁসি মকুবের আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
এর মধ্যে দলের উল্টো অবস্থানে হেঁটে যেমন রয়েছেন বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। তেমনই রয়েছেন কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার, সিপিএমের প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি, ডিএমকের তিরুচি শিবা, আইনজীবী রাম জেঠমলানী, কে টি এস তুলসি, অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, পরিচালক মহেশ ভট্ট, সমাজকর্মী অরুণা রায়, জেন ড্রেজ এবং একাধিক প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁদের আর্জি, ফাঁসির নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করা হোক।
ফাঁসি মকুবের দাবির পিছনে এঁদের যুক্তিও রয়েছে। যে ভাষায় সলমন খান বিতর্কিত টুইট করে বলেছিলেন, ইয়াকুব নয়, তাঁর ভাই টাইগারকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া উচিত, একই ভাবে এঁদেরও অনেকের মত, অন্য অভিযুক্তদের মত ইয়াকুব পালিয়ে থাকতে পারত। তা না করে ইয়াকুব সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছে। তাতে ভারত সরকারের কাছে স্পষ্ট হয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের মদত দিয়েছে। সেটিকে কূটনৈতিক স্তরে কাজে লাগাতে পারে ভারত। আইনজীবী কে টি এস তুলসির মতে, ‘‘ইয়াকুব ভারতকে যে সাহায্য করেছে, তাতে এ দেশের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’’ আইনজীবী শ্যাম কেসওয়ানির মতে, ‘‘ইয়াকুব বলছে না, সে নির্দোষ। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হোক, মৃত্যুদণ্ড নয়।’’ একই আবেদন করেছেন ইয়াকুবের স্ত্রী রহিন। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের কাছে সেই আবেদনও করেছেন তিনি।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বলেন, ‘‘অনেক দেশে এখন মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলছি না, তাঁর শাস্তি হবে না। শাস্তি হোক, কিন্তু আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে।’’ বস্তুত ২-৩ দিন বছর আগেই সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মানবতার দৃষ্টিভঙ্গীতে এমন কয়েকটি বিষয়ে তারা সোচ্চার হবে, যেগুলি বিশ্বের অনেক দেশে নজির গড়েছে। যৌথ আবেদনে দৃষ্টান্ত দেখানো হয়েছে, চন্দনদস্যু বীরপ্পনের সহযোগী, রাজীব গাঁধীর তিন হত্যাকারী, দেবেন্দ্র পাল সিংহ ভুল্লরের মৃত্যুদণ্ডও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট মকুব করেছে। ক্ষমা করে যে সদর্থক বার্তা পৌঁছানো যায়, প্রাণদণ্ড দিয়ে দেশের পরিস্থিতি আরও নিরাপদ করা সম্ভব নয়। তার উপর ইয়াকুব কুড়ি বছর ধরে জেলে রয়েছে। শুনানি শেষ হতে ১৪ বছর লেগেছে। এখন মানসিক ভারসাম্যও খুইয়েছে ইয়াকুব। এমন এক ব্যক্তিকে প্রাণদণ্ড দেওয়া যায় না।
কিন্তু দলগত ভাবে বিজেপি এই গোটা উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। এমনকী নিজের দলের ‘দলছুট’ সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হার সমর্থন সত্ত্বেও। বিজেপির অবস্থান জানিয়ে দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘যখন সন্ত্রাসবাদের কোনও রং হয় না, তখন সন্ত্রাসবাদীদের ধর্মের ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে কেন? ক্ষুদ্র রাজনীতির কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করা হচ্ছে। যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত শুনানির পর রায় দিয়েছে, তখন একজন সন্ত্রাসবাদীকে কেন বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে?’’ এটি কি দলের সাংসদ শত্রুঘ্নর জন্যও প্রযোজ্য? সম্বিতের জবাব, ‘‘সকলের জন্যই। মুম্বই বিস্ফোরণে যে ২৫৭ জন মারা গিয়েছেন, সেই পরিবারের কাছে এই ঘটনা বেদনাদায়ক। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন রায় দেওয়ার সময় রং ও ধর্মকে দেখে না।’’ সন্ত্রাসবাদীকে সমর্থন করার প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপি সাংসদরা আগামিকাল সংসদেও সোচ্চার হতে চলেছেন।