ব্যবহার নেই, সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে গবেষণাগারে

এক পক্ষ বলছেন— যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে, ব্যবহার করা হচ্ছে কোথায়! অন্য পক্ষের আক্ষেপ, যন্ত্রগুলি কাজে লাগলে অনেক সুবিধা হতো। এমনই ছবি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্ট্রাল ইনস্ট্রুমেন্টেশন’ গবেষণাগারে। সেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ’ (ইউজিসি) এবং কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের কাছে ওই গবেষণাগারের পুনরুজ্জীবনের জন্য সাহায্যের আবেদন জানানো হবে। টাকা না পেলে কার্যত তা বন্ধই থাকবে।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
Share:

এক পক্ষ বলছেন— যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে, ব্যবহার করা হচ্ছে কোথায়! অন্য পক্ষের আক্ষেপ, যন্ত্রগুলি কাজে লাগলে অনেক সুবিধা হতো। এমনই ছবি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্ট্রাল ইনস্ট্রুমেন্টেশন’ গবেষণাগারে। সেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ’ (ইউজিসি) এবং কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের কাছে ওই গবেষণাগারের পুনরুজ্জীবনের জন্য সাহায্যের আবেদন জানানো হবে। টাকা না পেলে কার্যত তা বন্ধই থাকবে।

Advertisement

২০০৭ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই গবেষণাগারটি তৈরি করা হয়। কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৫ মে। ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগের’ ভরসাতেই সেটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আয়োগের কাছ থেকে শুধু ‘নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স’ (এনএমআর) সরঞ্জাম পাওয়া যায়। অন্য সরঞ্জাম জোগাড় করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে। কয়েকটি কেনা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে। সে সবের মধ্যে রয়েছে— হাই পারফরমেন্স লিকুইড ক্রোমেটোগ্রাফি (এইচপিএলসি), অ্যাটমিক অ্যাবসর্পশন স্পেকটোমেট্রি (এএএস), গ্যাস ক্রোমেটোগ্রাফি মাস স্পেকটোমেট্রি (জিসিএমএস), ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম ইনফ্রা রেড (এফটিআইআর) স্পেকটোমিটার এবং ইমপেডেন্স অ্যানালাইজার। ২০১১ সালে বসানো হয় লিকুইড নাইট্রোজেন প্লান্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগগুলিকে উন্নত পরীক্ষাগারের সুবিধা দেওয়াই ছিল ওই গবেষণাগার তৈরির মূল উদ্দেশ্য। এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা এবং শিল্প-কারখানাগুলিও সেটিকে প্রয়োজনে ব্যবহার করবে বলে আশা করা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ছ’বছরে বাইরের কোনও সংস্থা বা শিল্পক্ষেত্র গবেষণাগারটি ব্যবহার করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগও ঠিকমতো তা ব্যবহার করতে পারেনি। এ মাসে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়। গবেষণাগারটির দায়িত্বে থাকা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অভীক গুপ্ত রিপোর্টটি পেশ করেন।

Advertisement

রিপোর্টে তিনি জানিয়েছেন, ওই গবেষণাগারে এক জন করে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রযুক্তিবিদ রয়েছেন। তার পরও সেটি ব্যবহার করা হয় না বললেই চলে। এক মাত্র হাই-পারফরমেন্স লিকুইড ক্রোমেটোগ্রাফি পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দু’দফায় নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স (এনএমআর) সরঞ্জামের ব্যবহার করা হয়েছে ১২ মাস। ২০১১ সালে টানা ১১ মাস। ২০১৩ সালে ১ মাস। অ্যাটমিক অ্যাবসর্পশন স্পেকটোমেট্রি (এএএস) কাজ করেছে নয় মাস। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের মে মাস পর্যন্ত। গ্যাস ক্রোমেটোগ্রাফি মাস স্পেকটোমেট্রি (জিসিএমএস) কাজে লেগেছে এক মাস। ২০১১ সালের ১৯ জুলাই থেকে ২১ অগস্ট পর্যন্ত। লিকুইড নাইট্রোজেন প্লান্টটি ২০১১ সালে বসানোর পর এখনও পর্যন্ত ব্যবহারই করা হয়নি। ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম ইনফ্রা রেড (এফটিআইআর) স্পেকটোমিটার এবং ইমপেডেন্স অ্যানালাইজারও কোনও দিন কাজে লেগেছে বলে বিভাগীয় খাতাপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। অভীকবাবু জানান, পাঁচ বছরে হাই পারফরমেন্স লিকুইড ক্রোমেটোগ্রাফি (এইচপিএলসি)-তে কাজ করেছেন ২৫ জন। অ্যাটমিক অ্যাবসর্পশন স্পেকটোমেট্রি (এএএস)-তে ৭ জন এবং গ্যাস ক্রোমেটোগ্রাফি মাস স্পেকটোমেট্রি (জিসিএমএস)-তে ২ জন। অন্য দিকে, ১১৫ জন গবেষক নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স (এনএমআর) যন্ত্র ব্যবহার করলেও, মাত্র ২ জন এই যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন। যন্ত্রপাতিগুলির অবস্থা এখন কেমন? রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এনএমআর ছাড়া কোনও যন্ত্রই নির্ধারিত মানের নয়। সেগুলিকে ঠিক করা সম্ভব নয়। এনএমআর-টি ২০১৩ সালে ঠিক করতে হয়। পরে সেটি বেশি দিন চলেনি। অভীকবাবু বলেন, ‘‘যন্ত্রপাতিগুলি পড়ে থেকে থেকে আরও বেশি নষ্ট হচ্ছে। যেটুকু ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাও সেগুলির কর্মক্ষমতার তুলনায় নগণ্য।’’ ব্যবহারকারী না-বাড়লে এই ধরনের গবেষণাগার রাখা যে অর্থহীন— তারও ইঙ্গিত রয়েছে রিপোর্টে। আর সেটি টিকিয়ে রাখতে হলে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স (এনএমআর) যন্ত্রটিকে মেরামত করতে হবে। নতুন একটি লিকুইড নাইট্রেজেন প্লান্ট বসাতে হবে। মাস পাঁচেক আগেও সেন্ট্রাল ইনস্ট্রুমেন্টেশন গবেষণাগারটি নিয়ে কথা ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়েছিল। তারাও একই পরামর্শ দেয়। সেই থেকে ওই গবেষণাগারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলে। একাংশের বক্তব্য, ব্যবহারকারী না-থাকলে ওই সব যন্ত্র রেখে কী লাভ! অন্য পক্ষের অভিযোগ, ব্যবহারকারী পাওয়া যায় না বললে সত্যি বলা হয় না। তাতে মনে হবে, এখানে বড় ধরনের কোনও কাজ হচ্ছে না। কিন্তু স্থানীয় গবেষকদের বিভিন্ন গ্রন্থ-স্মরণিকা ছাপা হচ্ছে। সেন্ট্রাল ইনস্ট্রুমেন্টেশন ল্যাবরেটরি তাঁদের কাছে বড় সহায়ক হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। যন্ত্রপাতিগুলি বসানোর পরই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাঁদের বাইরে গিয়েই কাজ করতে হয়। ওই পক্ষের দাবি, এ সব যন্ত্রপাতি কী ভাবে, কারা কিনেছিলেন— তার তদন্ত করা উচিত। কাউন্সিলের বৈঠকে অবশ্য কার দোষে এত মূল্যবান যন্ত্র নষ্ট হল, তা দেখার দাবি এড়িয়ে যাওয়া হয়। বরং স্থিতাবস্থা বজায়ের কথাই বলা হয়েছে। ইউজিসি টাকা দিলেই নতুন যন্ত্র কেনা হবে। তার আগে যেমন চলছে, তেমনই চলবে। নামেই গবেষণাগারটি টিকে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন