Rahul Gandhi

রাহুলেরা সরব ইভিএম নিয়ে, মানছে না কমিশন, বিজেপির মতে, হারের বাহানা

আজ সকালে অসমের করিমগঞ্জে ‘ইভিএম চুরি’ নিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৭
Share:

ফাইল চিত্র।

অসমে পাথারকান্দি আসনের বিজেপি প্রার্থীর গাড়িতে মিলল রাতাবাড়ি আসনের এক ভোটকেন্দ্রের ইভিএম! একে ঘিরে কাল রাতে উত্তাল হয়ে ওঠে করিমগঞ্জ জেলা। নির্বাচন কমিশন আজ ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার-সহ চার ভোটকর্মীকে সাসপেন্ড করেছে। ভোটের পরে ‘ইভিএম চুরি’ বা ইভিএম আনা-নেওয়ার বিধি ভাঙার বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর তরজা।

Advertisement

আজ সকালে অসমের করিমগঞ্জে ‘ইভিএম চুরি’ নিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। টুইট করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও। দিল্লিতে সন্ধেয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে পাথারকান্দির ঘটনা ও ইভিএম সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে অভিযোগ জানান। যদিও তার আগেই বিজেপির প্রতিনিধিরা পৌঁছে যান কমিশনের দফতরে। পরে দলের তরফে প্রকাশ জাভড়েকর কটাক্ষ ছোড়েন, অসমে ও পশ্চিমবঙ্গে হার হবে বুঝেই কংগ্রেস নেতারা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেভাগে নানা রকম বাহানা
তৈরি করছেন।

যে ভোটকেন্দ্রের ইভিএম নিয়ে এত কাণ্ড, সেই ইন্দিরা এমভি স্কুল ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিলেও কমিশন অবশ্য ইভিএম চুরির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, ভোটগ্রহণ সেরে রাতাবাড়ি আসনের ওই ভোটকেন্দ্রের ভোটকর্মীরা করিমগঞ্জ শহরের উদ্দেশে রওনা হন। সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় রাত ৯টায় তাঁদের গাড়ি রাস্তায় ফেঁসে যায়। সেক্টর অফিসারকে জানিয়েও তাঁরা যখন দেখেন, বিকল্প ব্যবস্থায় দেরি হচ্ছে, তখন পথে একটি গাড়িকে হাত দেখিয়ে ইভিএম নিয়ে উঠে পড়েন৷ রাত ১০টা নাগাদ কানিশাইলে যানজটে আটকে পড়েন তাঁরা। তখনই এক দল লোক গাড়িতে ঢিল ছুড়তে থাকে। ভোটকর্মীরা কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, গাড়িটি পাথারকান্দির বিধায়ক তথা বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু পালের৷ ইভিএম চুরির অভিযোগে তাঁরা গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।

Advertisement

কমিশন জানিয়েছে, গাড়িটি আসলে কৃষ্ণেন্দুবাবুর স্ত্রী মধুমিতা পালের। বিধায়ক বা তাঁর স্ত্রী তখন গাড়িতে ছিলেন না। খবর পেয়ে জেলাশাসক আনবুমাথান এমপি এবং পুলিশ সুপার ময়ঙ্ককুমার ঝা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে জনতা তাঁদের ওপর চড়াও হয়। চোট পান পুলিশ সুপার। শূন্যে গুলি ছুড়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে ইভিএম সিল করা অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়।

কিন্তু নতুন সমস্যা দেখা দেয় ফার্স্ট পোলিং অফিসারকে ঘিরে৷ তাঁর হদিস মিলছিল না। আজ ভোরে তিনি বেরিয়ে এসে জানান, ভয়ে সারা রাত ঝোপে লুকিয়ে ছিলেন। কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকের মতে, পোলিং পার্টিকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গাফিলতি করেছেন রক্ষীরা। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। কমিশন প্রিসাইডিং অফিসারকে শো-কজ় করেছে ট্রান্সপোর্ট প্রটোকল ভাঙার অভিযোগে। একই সঙ্গে ওই প্রিসাইডিং অফিসার-সহ চার জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

এআইসিসির মতে, এটা যথেষ্ট নয়। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মনীশ তিওয়ারি যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সকালে বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন প্রিয়ঙ্কা।

করিমগঞ্জ জেলায় ‘ইভিএম চুরি’ নিয়ে প্রিয়ঙ্কার বক্তব্য, প্রতি নির্বাচনের পরই ইভিএম ধরা পড়ার ঘটনা ঘটে৷ সব ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাড়িগুলি বিজেপি প্রার্থী বা তাঁদের সহযোগীদের। যাঁরা ওই ঘটনা ধরে ফেলেন, বিজেপি তাঁদেরই দোষারোপ করতে থাকে। তাঁর কথায়, “এই ধরনের বহু ঘটনা কমিশনের নজরে আনা হয়৷ কিন্তু ফল মেলে না।” প্রিয়ঙ্কার তাই অনুরোধ, কমিশন যেন ইভিএম সংক্রান্ত এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে ও রাজনৈতিক দলগুলির মতামত শোনে৷ রাহুল মন্তব্য করেন, “ইসিআই-এর গাড়ি খারাপ/ বিজেপির কপাল খারাপ/ গণতন্ত্রের হাল খারাপ।” সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভাপতি সুস্মিতা দেব কৃষ্ণেন্দু পালের প্রার্থিপদ বাতিলের দাবি জানান।

পাথারকান্দির বিধায়ক তথা বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুর জবাব, “ইভিএম আমার আসনের নয়, রাতাবাড়ির। আটকে পড়া ভোটকর্মীরা গাড়িতেই ছিলেন। গাড়িচালক মানবিকতার খাতিরে তাঁদের তুলে আনলেন। এখানে আমার দোষ কোথায়?” তাঁর খেদ, “উপকার করতে গিয়ে আমাদের গাড়ি ভাঙল, চালক মার খেলেন৷” করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবুমাথান এমপি-ও ইভিএম চুরির অভিযোগ উড়িয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার ভোটের পরে দরং জেলার কলাইগাঁওয়ে রাজা পুখুরিপার নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে পোলিং অফিসারদের ঘেরাও করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়, রবার বুলেট ছোড়ে। জখম হন দু’জন। সিদলি বিধানসভা কেন্দ্রের গরুভাষায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াইবিপিএফের প্রার্থী, মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্মর হয়ে প্রচার চলছিল। কমিশনের ফ্লাইং স্কোয়াড গিয়ে অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে বিপিএফ কর্মীরা তাদের বিজেপির এজেন্ট বলে গালাগালি শুরু করে। স্কোয়াড-সদস্য হিরণ্য বরুয়াকে মারধর করা হয়। ভিডিয়োগ্রাফার ওয়াজ়েদ আলির ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়।

পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে প্রতিবেশী অসমের এই খবরে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যে আজগুবি ব্যাখ্যা দিয়েছে তা অবিশ্বাস্যই নয়, বিপজ্জনকও। সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়ে ছেলেখেলা করছে। দেশের কাছে তারাও দায়বদ্ধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন