এ বার পুজোয় দূর অস্ত্ নয় দিল্লি!
চার মাস আগে থাকতে টিকিট কেটেও নাম ওয়েটিং লিস্টে, কিংবা রেলের ঠাঁই নেই বার্তায় পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার ভাবনাটাই শিকেয় তুলে রাখার কথা ভাবছেন যাঁরা— তাঁদের জন্য সুখবর আছে রেলের ভাঁড়ারে। সকলের সাধ মেটাতে না পারলেও প্রতিদিন কিছু বেশি মানুষের রাজধানী-যাত্রার বন্দোবস্ত করেছে সুরেশ প্রভুর রেল।
বাজেটে যিনি নতুন ট্রেন বাড়ানোর পথেই হাঁটেননি, সেই প্রভুই এখন কী এমন উপায় বার করলেন এর জন্য?
উপায়টা হল, বাড়তি কামরা। প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি রুটের রাজধানী এক্সপ্রসে অন্তত পাঁচটি করে বাড়তি কামরা জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। প্রথমটি দিল্লি-মুম্বই। মুম্বই রেলমন্ত্রীর নিজের শহর। আর দ্বিতীয়টি হল কলকাতা-দিল্লি। হাওড়া বা শিয়ালদহের মধ্যে যে কোনও একটি রাজধানীতে জোড়া হবে বাড়তি কামরা। তাতে ৩০০ থেকে ৩৫০
জন বেশি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। রেল সূত্রের দাবি, বাড়তি কামরা নিয়ে ছুটলেও গতি কমবে না রাজধানী এক্সপ্রসের।
শুধুই কি পুজোর চাপ সামলাতেই এই ব্যবস্থা?
প্রভুর মন্ত্রক বলছে, তা নয়। স্থায়ী ভাবেই গড়ে পাঁচটি কামরা জুড়তে চলেছে ওই রাজধানীগুলিতে। রাজধানীতে এই ব্যবস্থা সফল হলে পূর্বা ও কালকার মতো দিল্লিমুখী অন্যান্য ট্রেনেও অতিরিক্ত কামরা জোড়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রেল।
মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, দেশের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রুটেই ক্ষমতার থেকে বেশি সংখ্যায় ট্রেন চলছে। ফলে নতুন ট্রেন ঘোষণা করা সম্ভব নয়। বাজেটে তাই একটিও নতুন ট্রেন ঘোষণা করেননি রেলমন্ত্রী। তার বদলে জমি অধিগ্রহণ করে নতুন লাইন পাতার কাজে জোর দিচ্ছে রেল। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ কাজ। এই পরিস্থিতিতে ট্রেনে বাড়তি কামরা দেওয়াকেই বাস্তবসম্মত পথ বলে মনে করছে রেল। তাতে লাইনে নতুন ট্রেনের ভিড় বা চাপ বাড়বে না, উল্টে যাত্রী বহনের ক্ষমতা বেড়ে যাবে। সেই লক্ষ্যেই গত এক বছরে মোট ১১৪টি ট্রেনে ১২৩টি কামরা জুড়েছে রেল। তাতে সাফল্য মিলেছে। এ বার পরীক্ষা রাজধানীর।
রেল মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘পুজো বা গরমের ছুটির সময়ে শিয়ালদহ ও হাওড়া রাজধানীতে ১৮০-২০০ জনের নাম ওয়েটিং লিস্ট থাকে। নতুন ব্যবস্থায় তাঁদের অধিকাংশই যাত্রা করতে পারবেন বলে আশা করছি।’’
এত দিন ভাবা হয়নি কেন এই পথের কথা ?
মন্ত্রক জানাচ্ছে, মূলত দু’টি সমস্যা ছিল। প্ল্যাটফর্ম ও লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য।
অনেক স্টেশনেই ২৫ কামরার ট্রেন দাঁড়ানোর মতো লম্বা প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ধানবাদ, গয়ায় প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো হয়েছে। হাওড়ায় প্ল্যাটফর্ম নিয়ে সমস্যা হবে না। যদি শিয়ালদহ রাজধানীতে কোচ বাড়ানো হয়?
রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, বর্তমানে দু’টি ট্রেনেই কোচ সংখ্যা গড়ে কুড়িটি। দু’টোরই যাত্রী কামরার সংখ্যা ১৬। দু’টি ট্রেনেই পাঁচটি যাত্রী কামরা জোড়া সম্ভব। শিয়ালদহ থেকে আগেও ২৩ কামরার ট্রেন চালানো হয়েছে। যদি সমস্যা হয়, তবে পাঁচটির বদলে চারটি কামরা জোড়া হতে পারে, নয়তো বাড়িয়ে নেওয়া হবে প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য।
ছোট স্টেশনগুলিতে যে লুপ লাইনগুলি রয়েছে সেগুলিতে সর্বাধিক ২০-২১ কামরার ট্রেন দাঁড়াতে পারে। সাধারণত, যখন কোনও দ্রুত গতির ট্রেন (রাজধানী, দুরন্ত) ছোট স্টেশন পার হয়, তখন লোকাল, প্যাসেঞ্জার বা মালগাড়ি ওই লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু কখনও কখনও রাজধানী-দুরন্তের মতো ট্রেনকেও লুপ লাইনে ঠেলে দিতে হয়। ২৫ কামরার রাজধানীর কথা ভেবে লুপ লাইনের দৈর্ঘ্যও বাড়ানো হয়েছে।
রেল মন্ত্রক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির ছাড়পত্রের উপর। মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, ‘‘চলতি সপ্তাহেই ওই ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
তারা সবুজ সঙ্কেত দিলেই তা চালু হয়ে যাবে।’’ মন্ত্রকের আশা, ছাড়পত্র দ্রুত এসে যাবে। তাতে ২৫ কামরার একটি রাজধানী অন্তত পুজোর উপহার হিসেবে পেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।