কম্পিউটারে মাউসে বারকয়েক ক্লিক। অথবা মোবাইলের স্ক্রিনে আঙুলের আঁকিবুকি। টাকাপয়সার লেনদেন আজকাল অনেক ক্ষেত্রে এ ভাবেই হতে দেখি আমরা। তবে তা সব ক্ষেত্রে নয়। বাসে–ট্রেনে, বাজার–দোকানে আজও লেনদেন হয় নগদে। কাগজের নোটের পাশাপাশি তাতে থাকে খুচরো কয়েনও। কিন্তু কয়েনগুলি কখনও ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেছেন কি?
কয়েনের মূল্য ও অশোক স্তম্ভ ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে তাতে। যেমন ধরুন টাঁকশাল। কয়েন দেখে বলে দেওয়া যেতে পারে, দেশের কোন টাঁকশালে তৈরি হয়েছে সেটি।
কী ভাবে বুঝবেন? জানতে হলে ফিরে যেতে হয় কয়েক শতক। কলকাতার তারাতলা টাঁকশালটি ভারতের প্রথম টাঁকশাল। ১৭৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি।
যেহেতু দেশের প্রথম টাঁকশাল, তাই গুরুত্ব বোঝাতে আলাদা করে কোনও প্রতীকী চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না এখান থেকে উৎপন্ন কয়েনগুলিতে। অর্থাৎ কয়েন তৈরির বছর যেখানে লেখা থাকে, তার নীচে কোনও বিশেষ চিহ্ন না থাকলে বুঝবেন সেটি কলকাতার টাঁকশালে তৈরি।
দেশের দ্বিতীয় টাঁকশালটি প্রতিষ্ঠিত হয় মুম্বইয়ে। ১৮২৯ সালে। এখানে তৈরি কয়েনে একাধিক ‘টাঁকশাল চিহ্ন’ রয়েছে। কয়েন তৈরির বছর যেখানে উল্লেখ রয়েছে, ঠিক তার নীচে হীরক চিহ্ন থাকলে বুঝে নিতে হবে সেটি মুম্বইয়ের টাঁকশালে তৈরি।
১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ আমলের ‘বম্বে’ হটিয়ে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত শহরের নাম বদলে ‘মুম্বই’ করে সেনা। তাই যদি কোনও কয়েনে উৎপাদনের বছরের তলায় ইংরেজিতে ‘বি’ লেখা থাকে, তা হলে বুঝতে হবে সেটি মুম্বইয়েই তৈরি, তবে নাম বদলের আগে। আর ‘এম’ লেখা কয়েনগুলি নাম বদলের পরে।
১৯০৩ সালে হায়দরাবাদে দেশের তৃতীয় টাঁকশালটির প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন নিজাম সরকার। কোনও কয়েনের সালের নীচে নক্ষত্র চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে সেটি হায়দরাবাদে তৈরি। আবার অর্ধেক হীরকখণ্ড অথবা তারার মধ্যে একটি বিন্দু থাকলে সেটিও তৈরি হায়দরাবাদের টাঁকশালে তৈরি হয়েছে বুঝতে হবে।
দেশের চতুর্থ এবং শেষ টাঁকশালটি তৈরি হয় উত্তরপ্রদেশের নয়ডায়। ১৯৮৪ সালে। কয়েন তৈরির বছরের নীচে গোল বিন্দু থাকলে বুঝতে হবে সেটি নয়ডার টাঁকশালে তৈরি।
তবে সব কয়েনই দেশীয় টাঁকশালে তৈরি নয়। মুদ্রা উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে, ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধিকবার লন্ডন, কানাডা, মেক্সিকো দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডমিনিকান রিপাবলিক, রাশিয়ার টাঁকশালে তৈরি কয়েনও আমদানি করেছে ভারত।