‘যথেষ্ট হয়েছে, গণপ্রহারের সংস্কৃতি এ বার বন্ধ করুন’, যোগীর সঙ্গে সাক্ষাতে অনুরোধ ইনস্পেক্টরের ছেলের

অচঞ্চল গলায় বলছেন, ‘‘আজ আমার বাবা মারা গিয়েছেন, কাল হয়তো এরা কোনও আইজিকে মেরে দেবে, তার পরে কোনও মন্ত্রীকে। এটা চলতে পারে না।’’ 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৫
Share:

নিহত পুলিশ অফিসার সুবোধকুমার সিংহের পরিবারের সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ। বৃহস্পতিবার লখনউয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। ছবি: পিটিআই।

টিভি ক্যামেরার সামনে বসে মুণ্ডিতমস্তক সদ্য-তরুণ। অচঞ্চল গলায় বলছেন, ‘‘আজ আমার বাবা মারা গিয়েছেন, কাল হয়তো এরা কোনও আইজিকে মেরে দেবে, তার পরে কোনও মন্ত্রীকে। এটা চলতে পারে না।’’

Advertisement

একটু পরেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন অভিষেক সিংহ। বুলন্দশহরের নিহত ইনস্পেক্টর সুবোধকুমার সিংহের ছোট ছেলে। সঙ্গে যাবেন মা রশ্মি আর দাদা শ্রেয়কুমার। কী বলবেন মুখ্যমন্ত্রীকে, জানতে চাওয়ায় অভিষেক বলছিলেন, ‘‘শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, সারা ভারতকে আমার অনুরোধ, সাম্প্রদায়িক হিংসা, গণপ্রহারের সংস্কৃতি বন্ধ করুন।’’ এই সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো ফেসবুকে দিয়ে রাহুল গাঁধী লিখেছেন, ‘‘অভিষেক, আপনার জন্য আপনার বাবা গর্ববোধ করতেন। দেশ আপনাকে নিয়ে গর্বিত।’’

গত সোমবারের হিংসায় সুবোধ ও স্থানীয় যুবক সুমিতকুমার নিহত হওয়া সত্ত্বেও গো-হত্যাকারীদের ধরা নিয়েই যোগী বেশি ভাবছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। আজ অবশ্য নিহত ইনস্পেক্টরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে সেই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ। পরে দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও যোগী বুলন্দশহর নিয়ে কথা বলেছেন বলে সূত্রের খবর। রাজ্যের মন্ত্রী অতুল গর্গ জানিয়েছেন, এটা’ জেলায় সুবোধের গ্রামে যাওয়ার রাস্তা, জৈথরা-কুরাভলী রোডের নতুন নাম হবে ‘শ্রী সুবোধকুমার সিংহ শহিদ মার্গ’। তাঁর নামে একটি কলেজের নামও রাখা হবে। ২৫-৩০ লক্ষ টাকার গৃহ ও শিক্ষাঋণ রয়েছে সুবোধের পরিবারের। সরকারই তা মেটাবে। ডিজি বলেন, ‘‘বিশেষ পেনশন ছাড়াও আমরা ওঁদের চাকরি দিতে চেয়েছি। তবে সুবোধের দুই ছেলেই পড়াশোনা করছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ এ ছাড়া রশ্মির জন্য ৪০ লক্ষ এবং সুবোধের বাবা-মায়ের জন্য ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য ঘোষণা করেছেন যোগী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থাকে রশ্মি পরে জানান, দাদরি কাণ্ডের প্রথম তদন্তকারী অফিসার সুবোধের কাছে হুমকি দিয়ে ফোন আসত। তিনি সেগুলো রেকর্ড করে রাখতেন। খুনের দিন সুবোধের মোবাইল খোয়া যাওয়ায় তাঁর আশঙ্কা, রেকর্ডিংয়ের কথা হয়তো কেউ জানত। আজ ইন্টারনেটে একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, যোগীকে রশ্মি বলছেন, ‘‘স্বামী আমাকে সিয়ানা থানায় ডেকে পাঠাতেন, কারণ ওঁর সঙ্গে দেখা হত কম। শেষ বার গিয়ে দেখেছিলাম, গরু মারার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিয়ানার বিধায়ক দেবেন্দ্র সিংহ লোধির ফোন এসেছিল। উনি বাথরুমে ছিলেন। আমাকে ফোন ধরতে বলেছিলেন।’’

পরের কথাবার্তা অস্পষ্ট। তবে এক সিনিয়র অফিসারের দাবি, হুমকির কথা রশ্মি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। শ্রেয়কুমার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দোষীরা শাস্তি পাবে।’’

ঘটনার মূল অভিযুক্ত, বজরং দল নেতা যোগেশ রাজ অবশ্য এখনও অধরা। হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়োয় যোগেশ দাবি করেছিলেন, কয়েক জন সংখ্যালঘুকে গরু জবাই করার সময়ে দেখে ফেলেছিলেন তাঁরা। যদিও যাঁর জমিতে মৃত গবাদি পশু পড়ে ছিল, সেই রাজকুমার চৌধরির দাবি, এক গ্রামবাসীই প্রথম সেগুলি দেখতে পান। আজ হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়োয় দেখা দিয়েছেন আর এক অভিযুক্ত, বিজেপি নেতা শিখর আগরওয়াল। সুবোধকে ‘মুসলিমদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট’ বলেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন