প্রায় সব পণ্যের দাম এবং যাবতীয় পরিষেবার মাসুল যখন ঊর্ধ্বমুখী, সেই সময়ে শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে ভাড়া কমিয়ে চমক দিতে চাইছে রেল। লোকসান কমিয়ে নিজেদের আর্থিক স্বাস্থ্য উদ্ধারই তাদের লক্ষ্য।
দ্রুত গতি আর স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর রেখে অনেকটা বেশি ভাড়াতেই চালু করা হয়েছিল শতাব্দী এক্সপ্রেস। কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী মিলছে না। তাই ওই ধরনের অন্তত ২৫টি ট্রেনে ভাড়া কমে সাধারণ এসি বাসের স্তরে নেমে আসতে পারে বলে রেল মন্ত্রক সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। উদ্দেশ্য, যাত্রী বাড়িয়ে ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনা।
সারা দেশে প্রায় ৪৫টি শতাব্দী এক্সপ্রেস চলে বিভিন্ন রুটে। তাতে প্রিমিয়াম শ্রেণির ভাড়া সাধারণ ট্রেনের চেয়ে অনেকটাই বেশি। অনেক রুটের শতাব্দীতে ভাড়া অত্যধিক বলেই পর্যাপ্ত যাত্রী মেলে না। প্রত্যাশিত হারে যাত্রী না-মেলায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে রেলকে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, দু’-একটি রাজ্যে শতাব্দী এক্সপ্রেস তুলে দিয়ে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস চালুর দাবিও উঠছে। তাই ভাড়া কমিয়ে যাত্রী টানার কথা ভাবছে রেল। প্রথম দফায় অন্তত ২৫টি শতাব্দীতে এই পরিকল্পনা বলবৎ হতে পারে।
এক রেলকর্তা জানান, একটি পাইলট প্রজেক্টে এই পরিকল্পনায় সাফল্য মেলায় ভাড়া কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত বছর নতুন দিল্লি-অজমের এবং চেন্নাই-মহীশূর রুটে শতাব্দী এক্সপ্রেস নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় জয়পুর ও অজমের এবং বেঙ্গালুরু ও মহীশূরের মধ্যে ভাড়া কমানোর উদ্যোগ শুরু হয়। প্রিমিয়াম শ্রেণির ট্রেনের ভাড়াকে কার্যত নামিয়ে আনা হয় এসি বাসের স্তরে। ভাড়া কমে হয় ৩০০-৪০০ টাকা। নতুন ব্যবস্থায় গত বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৬০ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে। আয় বেড়েছে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।
আরও পড়ুন: যান-শাসনেও এ বার প্রিয়ার চোখের ইশারা
এই ফলে রেল-কর্তৃপক্ষ উৎফুল্ল। বছরভর যে-সব শতাব্দী এক্সপ্রেসে যাত্রী মেলে না, সেগুলিতে তাঁরা ওই ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছেন। এ রাজ্যে পূর্ব রেলের আওতায় তিনটি শতাব্দী এক্সপ্রেস রয়েছে। সেগুলি চলে হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি, হাওড়া-রাঁচী এবং শিয়ালদহ-পুরী রুটে। হাওড়া-রাঁচী শতাব্দীতে যাত্রী তেমন হয় না। এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলাচলকারী কোন কোন ট্রেনে ভাড়া কমবে, এখনও তা স্পষ্ট নয়। তবে ভাড়া কমলে নিশ্চিত ভাবে তার সুবিধা যাত্রীরা পাবেন।’’
কোচ ও রেকের সামর্থ্য অনুযায়ী সব ট্রেনেরই সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় রেল। সেই জন্য রাজধানী, দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে ‘ফ্লেক্সিফেয়ার’ প্রথা তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান রেলের এক আধিকারিক।