Plane Crash In Ahmedabad

এফআইআর হয়নি, বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত ‘ইউডি কেসে’ই

বিশেষজ্ঞদের মহল থেকে বিমান বিপর্যয়ের সম্ভাব্য নানা তত্ত্ব সামনে আসছে। তবে বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে কী সূত্র মিলল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে জোরকদমে তদন্ত চালাতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০৭:২৫
Share:

মা অঞ্জলিকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা বিজয় রূপাণীর ছোট ছেলে ঋষভের। সোমবার আমদাবাদের হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

২৪২ জন যাত্রী-সহ এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় সোমবার রাত পর্যন্ত ২৭৬ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে গুজরাত প্রশাসন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও চার দিন পরেও এই ঘটনায় এফআইআর রুজু করা হয়নি। আমদাবাদ পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও সবটাই চলছে বিমানটি যেখানে ভেঙে পড়ে সেখানকার অর্থাৎ মেঘানী নগর থানায় রুজু হওয়া প্রাথমিক ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ কেস’-এর ভিত্তিতেই। ‘ইউডি/০০১৯/২০২৫’ নম্বরের সেই ‘আন আইডেন্টিফায়েড ডেথ কেস’ ধরেই তদন্ত চালাচ্ছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ), এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। আইনজীবীদের এক অংশের বক্তব্য, এ ব্যাপারে জোরালো আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এত বড় বিপর্যয়ে এফআইআর দায়ের করাই দস্তুর।

বিশেষজ্ঞদের মহল থেকে বিমান বিপর্যয়ের সম্ভাব্য নানা তত্ত্ব সামনে আসছে। তবে বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে কী সূত্র মিলল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে জোরকদমে তদন্ত চালাতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে। নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। বিমান পরিবহণ সংস্থার একাধিক আধিকারিকের পাশাপাশি সেখানে রয়েছেন এএআইবি-র সদস্যেরা। সোমবার আমদাবাদে পৌঁছেছেন বোয়িং সংস্থার প্রতিনিধিরা। ব্যুরোকে তদন্তে সাহায্য করবেন তাঁরা। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড, ফেডেরাল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ব্রিটেনের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির প্রতিনিধিদলও।

আইনজীবীদের বড় অংশই বলছেন, সাধারণ ভাবে এমন যে কোনও ঘটনায় দ্রুত এফআইআর রুজু করা হয়। নানা মামলায় সুপ্রিম কোর্টও দ্রুত এফআইআর রুজু করে তারপরে তদন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। এত জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে যে ঘটনায়, সেখানে এখনও এফআইআর-ই হল না? আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এমন সব ক্ষেত্রে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বা অন্য তদন্তকারী সংস্থা এফআইআর করতে পারে। এরপর তদন্তে যা উঠে আসবে, সেই অনুযায়ী পরে ধারাও যুক্ত করতে পারে। তার পরে চার্জশিট দিয়ে তদন্তে যা যা পাওয়া গিয়েছে এবং সেই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তকারী সংস্থা কী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে তা জানাতে পারে। কিন্তু এফআইআরই না হলে তদন্ত সম্পর্কে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে।’’ আইনজীবী তুহিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘হয় বিমান পরিষেবা সংস্থা, নয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, নয়তো বিমান চালক বা অন্য কিছু বা অন্য কেউ— কারও না কারও, গাফিলতি তো রয়েছেই। এ ক্ষেত্রে গাফিলতি বা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এখনও এফআইআর না করায় প্রশ্ন ওঠে, বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে কি তবে পথ হাতড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা? না কি এর পিছনে অন্য কোনও রাজনীতি চলছে?’’ আইনজীবীরা আরও জানাচ্ছেন, এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এফআইআরের কাগজ পাওয়া অধিকার। তাঁরা হয়তো এখন মরদেহ পাওয়ার ব্যাপারেই ব্যস্ত রয়েছেন। পরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এর জেরে সমস্যা তৈরি হতে পারে।আরজি কর-কাণ্ডেও একই ভাবে ইউডি কেস করে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কলকাতা পুলিশের ভূমিকা। প্রথম থেকে দেখেই যেখানে বোঝা যাচ্ছে, ওই ঘটনা একটি খুন, ধর্ষণের ব্যাপার সেখানে রাত পর্যন্ত কেন এফআইআর রুজু করা হয়নি সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। গুজরাত পুলিশের তদন্ত সম্পর্কে খোঁজখবর করতে প্রথমেই যাওয়া হয়েছিল মেঘানী নগর থানায়। দেখা গেল, সেই থানার প্রায় সমস্ত পুলিশকর্মী ঘটনাস্থল পাহারায় ব্যস্ত। তার মধ্যেই এক কনস্টেবল খাতায় দেখালেন, ঘটনার দিনের 'ইউডি (আন আইডেন্টিফায়েড ডেথ) স্টেটাস রিপোর্ট'। তাতে লেখা হয়েছে, ১২ জুন দুপুর ১টা ৪৪ মিনিটে মেঘানী নগর থানার পুলিশ ভ্যান এবং পিসিআর ভ্যানে আমদাবাদ সিটি পুলিশের ফোন আসে। জানানো হয়, রক্ষাশক্তি ইউনিভার্সিটির পুরনো ক্যাম্পাসের কাছে পুরনো আইজিপি কম্পাউন্ডে আগুন লেগেছে। মেঘানী নগর থানার প্রধান অফিসার ইন্সপেক্টর ডিবি বৈশ্য এর পর লিখেছেন, থানার খাতায় জিডি নম্বর ১৫/২৫ রুজু করে ১টা ৫৫ মিনিটে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছন। দেখেন, একটি যাত্রীবাহী বিমান ছাত্রদের হস্টেলের মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এর জেরে বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে। বহু মানুষ আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশকেই উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়, দমকলে খবর দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষ উদ্ধার কাজে হাত লাগান। যত জনকে পারা গিয়েছে দ্রুত পাশের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাতে থানায় ফিরে তিনি লেখেন ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ কেস (ইউডি/০০১৯/২০২৫)’। শুক্রবার রাতে সই করে বৈশ্য এই কেস ডায়েরি তুলে দেন আমদাবাদ পুলিশের বিমান বন্দর এলাকার নরোদা থানার অফিসার পিভি গোয়েলের হাতে। নরোদা থানায় গেলে পিভি গোয়েল বলেন, "ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৯৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়ে সুরতহাল করা হয়েছে। বাকি কিছুই বলা যাবে না। তদন্ত চলছে।"আর আমদাবাদ সিটি পুলিশের কমিশনার জ্ঞানেন্দ্রসিংহ মালিকের বক্তব্য, ‘‘ব্যাপারটা নিয়ে প্রশাসনিক স্তর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে রাস্তা তো খোলাই আছে। যে কোনও দিন তদন্তে কিছু বেরোলেই এফআইআর করা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন