দেশ জুড়ে বেশ কিছু উড়ান বাতিল করতে হয়েছে। সময় মেনে উড়ান চালানোর যে-মাইলফলক ছুঁতে চাইছে এয়ার ইন্ডিয়া (এআই), তা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। কুয়াশা বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক বিপত্তি নয়। আসলে অসহযোগিতার পথে নেমেছেন সংস্থার ক্ষুব্ধ পাইলটেরা। অসহযোগ মানে কর্মী ইউনিয়নের ভাষায় ‘নিয়মমাফিক কাজ’। অর্থাৎ নিয়ম অনুযায়ী যতটা কাজ করার কথা, তার বেশি নয়। তাতেই বিপত্তি।
এয়ার ইন্ডিয়ার ৯০০ পাইলটকে নিয়ে তৈরি সংগঠন ইন্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (আইসিপিএ) বুধবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, যতটুকু নিয়মে রয়েছে, তাঁরা ততটুকুই করবেন। সংস্থার ‘ভাল’র জন্য পাইলটেরা এত দিন যে-সমঝোতা, মানে বাড়তি কাজ করছিলেন, তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
আকাশ পরিবহণের মতো পরিষেবায় কেন এই পদক্ষেপ?
পাইলট সংগঠন আইসিপিএ-র বক্তব্য, এমনিতেই পাইলটেরা এখন এক মাস দেরিতে বেতন পাচ্ছেন। সেপ্টেম্বরের বেতন পেয়েছেন নভেম্বরে। অক্টোবরের বেতন এখনও পাননি। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও লাভ হয়নি। তার পরেই অসহযোগিতার এই সিদ্ধান্ত।
এক জন পাইলট দিনে সর্বাধিক আট ঘণ্টা উড়তে পারেন। বিমানবন্দরে ঢোকা থেকে বেরোনো পর্যন্ত ‘ডিউটি আওয়ার্স’ বা কাজের সময় সর্বাধিক ১২ ঘণ্টায় বাঁধা আছে। এই নিয়ম ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর তৈরি। ‘‘অন্য কোনও শহর থেকে শেষ উড়ান নিয়ে ফেরার সময় হয়তো কখনও দেখা যায়, সেই ১২ ঘণ্টার নিয়মটা মানা যাচ্ছে না। হয়তো কলকাতায় নেমে বিমানবন্দর থেকে বেরোতে বেরোতে সেটা বেড়ে ১৩ অথবা সাড়ে ১৩ হয়ে যাবে। আমরা সংস্থার কথা ভেবে ওই অতিরিক্ত সময়টুকু কাজ করে দিই,’’ বললেন এক সিনিয়র পাইলট।
সম্প্রতি দিল্লি থেকে ব্যাঙ্কক গিয়ে ফিরতি পথের যাত্রীদের নিয়ে বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল দুই পাইলটের। ব্যাঙ্কক থেকে ওড়ার আগে তাঁরা দেখেন, বেঙ্গালুরু পৌঁছনোর আগেই তাঁদের ১২ ঘণ্টা ডিউটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা ওড়েননি। সে-দিন ব্যাঙ্ককে বসে যায় বিমানটি। পাইলট ও বিমানকর্মী, যাত্রীদের হোটেলে রাখা এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত ব্যাঙ্কক বিমানবন্দরে বিমান রাখার অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয় সংস্থাকে। এখানেই শেষ নয়। বেঙ্গালুরু ফিরে ওই বিমানের অন্য শহরে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ফলে সে-দিন পরপর বেশ কয়েকটি উড়ান বাতিল করতে হয়।
তবে পাইলটদের অসহযোগ কর্মসূচির কোনও প্রভাব উড়ান পরিষেবায় পড়ছে না বলে এয়ার ইন্ডিয়া-কর্তৃপক্ষের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেতন নয়, পাইলটদের উড়ান ভাতা দিতে দেরি হচ্ছে।