—ফাইল চিত্র।
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবের জামিনের আবেদনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কলকাতা পুলিশের একটি নথি। আবার সেই নথির সূত্রে সিবিআইয়ের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের বিবাদ ফের শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনিক মহলের একাংশে।
পশুখাদ্য মামলার রাজসাক্ষী দীপেশ চন্দকের বয়ান উল্লেখ করে ওই নথিতে দাবি করা হয়েছে, ২৩ বছর আগে ওই মামলায় লালুপ্রসাদকে জড়াতে ‘ভূমিকা’ ছিল আইপিএস অফিসার রাকেশ আস্থানার। ঘটনাচক্রে, সারদা-নারদ তদন্তের গতি বাড়িয়েছিলেন সেই আস্থানা। এখন কলকাতা পুলিশ আলিপুর আদালতে আবেদন করে ওই নথি রাঁচীর আদালতে পাঠানোর আবেদন করেছে।
চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবসায়ী দীপেশকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। গত ২৫ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশের সাউথ ডিভিশনের তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তপনকুমার প্রামাণিক আলিপুর আদালতে আবেদন জানিয়ে বলেন, চন্দকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ১৯৯৬ সালে সিবিআইয়ের ৩৬ (এ) মামলার সঙ্গে যুক্ত। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির এই মামলায় এখন রাঁচীর আদালতে শুনানি চলছে। এ দিকে সুপ্রিম কোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। নথিটি রাঁচীর আদালতে পেশ হলে তা জামিনের আবেদনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের মত।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘অন্য একটি মামলার তদন্তে জেরার সময় চন্দক যা বলেছেন, তা পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির বিষয়ে জরুরি তথ্য। সেই কারণে রাঁচীর আদালতে তা পাঠানো হচ্ছে।’’ সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘দীপেশ চন্দক এক জন রাজসাক্ষী। মামলা চলাকালীন রাজসাক্ষীও একজন অভিযুক্ত। ২৩ বছর আগের মামলায় এমনই এক অভিযুক্তের বয়ান অন্য একটি মামলা সূত্রে নিয়ে রাঁচী পাঠাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। চাইলে আমরাও সারদা-নারদ মামলায় অভিযুক্তদের বয়ান নিয়ে একই পথ নিতে পারি।’’
আলিপুর আদালতে পেশ হওয়া কলকাতা পুলিশের নথি।
দীপেশ পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির ১৩১৪টি মামলার রাজসাক্ষী। কলকাতা পুলিশের নথি অনুযায়ী, দীপেশ তাদের জানিয়েছেন, তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বিহারে পশুখাদ্য সরবরাহ করতেন। ১৯৯৬ সালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি সামনে আসে। সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত যায়। তাতে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদের সঙ্গে তিনিও জড়িয়ে পড়েন এবং আত্মগোপন করেন। পরে তাঁকে সিবিআইয়ের ধানবাদের তৎকালীন এসপি রাকেশ আস্থানা রাজসাক্ষী করেছিলেন বলে দীপেশের দাবি।
কলকাতা পুলিশ আদালতে পেশ করা নথিতে দাবি করেছে, সে সময়ে শিলিগুড়ির সিপিএম নেতাদের একাংশের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ ছিল দীপেশের। তাঁদের এক জনের সূত্রে আস্থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন দীপেশ। প্রায় ১৫ দিন ধরে আস্থানা তাঁকে জেরা করেন। নথি অনুযায়ী, দীপেশ কলকাতা পুলিশের কাছে বয়ানে দাবি করেন, রাকেশের প্রস্তাব ছিল, মামলা থেকে বাঁচতে হলে রাজসাক্ষী হয়ে যান। সে জন্য তাঁর বাড়ি থেকে তল্লাশি চালিয়ে অন্তত দেড় কোটি টাকা সিবিআইকে উদ্ধার করতে হবে। তাঁর কাছে সে সময় ৮০-৯০ লক্ষ টাকা ছিল। শেষ পর্যন্ত চন্দক ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন বলে দাবি। সিবিআই ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে তা কলকাতার আর্ল স্ট্রিটে চন্দকের বাড়ি এবং এজেসি বসু রোডের ফরচুনা বিল্ডিং থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করে।
কলকাতা পুলিশের নথি বলছে, চন্দক জেরায় জানান, ২০১৮-র মে’তে রাঁচীর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত আরসি-৩৮(এ)/ ৯৬ মামলায় তাঁর এবং সিবিআই অফিসার এ কে ঝায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ করতে অস্বীকার করে। উল্টে তাঁদের অভিযুক্ত হিসেবে নথিভুক্ত করে। পরে উচ্চ আদালত সে ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেয় বলে জানিয়েছেন দীপেশ।