খাবার-পরিবেশক সুশান্ত বেহারা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
চলন্ত ট্রেনের সংরক্ষিত বাতানুকূল কামরায় এক খাবার-পরিবেশককে ধরে পেটাচ্ছেন দু’জন যাত্রী। নিজেদের আসনে বসে সহযাত্রীরা সেই দৃশ্য দেখছেন। সোমবার শিয়ালদহ থেকে ছাড়া রাজধানী এক্সপ্রেসের তৃতীয় শ্রেণির (বি-১৩) কামরার এই ঘটনায় রেল-কর্তৃপক্ষ হতভম্ব। কেননা খাবারদাবার নিয়ে ট্রেনে মাঝেমধ্যে অভিযোগ ওঠে, ক্ষোভ-বিক্ষোভও হয়। কিন্তু খাবার-পরিবেশককে মারধরের নজির বিশেষ নেই।
রেল সূত্রের খবর, ট্রেনের মেঝেতে ফেলে প্রায় ১০ মিনিট ধরে মারের চোটে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন ওই কর্মী। তার পরেও বাকি যাত্রীদের কেউ এগিয়ে আসেননি। দীর্ঘ ক্ষণ মেঝেতেই পড়ে থাকার পরে সহকর্মীরা দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেন। সংশ্লিষ্ট কামরায় চলে আসেন ট্রেন ম্যানেজার ও টিকিট পরীক্ষকেরা। ওই দুই যাত্রীকে শনাক্ত করে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ট্রেন ম্যানেজারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত দুই যাত্রীকে গ্রেফতার করে রেল পুলিশ। প্রহৃত খাবার-পরিবেশকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ট্রেনটি গয়ায় পৌঁছলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
ওই কামরার যাত্রীরা জানান, ঘটনাটি ঘটে রাত সাড়ে ৮টা-পৌনে ৯টা নাগাদ। রাতের খাবার সরবরাহ শেষের পথে। শেষ পাতে আইসক্রিম দেওয়া হচ্ছিল। সুশান্ত বেহারা নামে এক খাবার-পরিবেশক একটি প্লাস্টিক ট্রে-তে আইসক্রিম সাজিয়ে মাথায় নিয়ে যাত্রীদের পরিবেশন করছিলেন। তখন ট্রেনটি চলছিল বেশ জোরে। তাই টাল সামলাতে না-পেরে সুশান্তের মাথার ট্রে একটু কাত হয়ে ১৫ নম্বর আসনের যাত্রীর গায়ে লাগে। তার পরেই তুলকালাম!
রেলের অভিযোগ, মহম্মদ জাইদ নামে ওই যাত্রী নিজের আসন ছেড়ে উঠে সুশান্তকে মারতে শুরু করেন। জাইদের সঙ্গে যোগ দেন তাঁর পাশের আসনের যাত্রী মহম্মদ কুরেশি। সুশান্ত কামরার মেঝেতে গড়িয়ে পড়েন। এক যাত্রীর অভিযোগ, মারধর চলে ১০ মিনিট ধরে। সুশান্ত নেতিয়ে পড়লে ওই দু’জন নিজেদের আসনে বসে পড়েন। কিন্তু সহযাত্রীদের কেউ এগিয়ে এলেন না কেন, তার ব্যাখ্যা দেননি অভিযোগকারী যাত্রীরা।
রেলের খবর, সুশান্তের বাঁ হাতে ও বাঁ পায়ে এখনও সাড় ফেরেনি। চোট-আঘাত রয়েছে শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও। রেলের কেটারিং ও টুরিজম কর্পোরেশনের গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্র জানান, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে সুশান্তকে কলকাতায় এনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।