আত্মঘাতী স্ত্রী-মেয়ের শেষকৃত্যের জন্য অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে প্রতিবেশীদের বলেছিলেন, ‘‘জীবন থেমে থাকে না, এগিয়ে যাবে।’’ তার দু’মাসের মাথায়, আজ দিল্লির বাড়ি থেকে উদ্ধার হল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সেই প্রাক্তন আমলা বি কে বনশল ও তাঁর ছেলে যোগেশের ঝুলন্ত দেহ।
মুম্বইয়ের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে ৯ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গত ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের অন্যতম শীর্ষ কর্তা (ডিজি) বনশল। তদন্তে নেমে সিবিআই তাঁর বাড়ি থেকে ৬০ লক্ষ টাকা, ২০টি জমিজমা-সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিল ও ৬০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কাগজপত্র উদ্ধার করে। বনশল গ্রেফতার হওয়ার দু’দিনের মাথায় আত্মঘাতী হন তাঁর স্ত্রী সত্যবালা (৫৮) এবং মেয়ে নেহা (২৭)। তাঁদের দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয় সুইসাইড নোট। দুটি চিঠিরই বয়ান ছিল এক। লেখা ছিল, বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির জেরে অপমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না ছেলে যোগেশ। সূত্রের অবশ্য দাবি, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন গোয়েন্দারা।
একাধিক বার অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বাড়ে বনশলের। শেষ পর্যন্ত ৩০ অগস্ট নিয়মিত (রেগুলার) জামিন পান তিনি। দিন দশেক আগে ছেলেকে নিয়ে ফিরেছিলেন মধু বিহারের বাড়িতে। গত কালও হাজিরা দিয়েছিলেন সিবিআই অফিসে। তাঁদের সঙ্গে শেষ কথা হয় এক পুরোহিতের। বেশ কিছুদিন ধরেই বনশলদের বাড়িতে পুজোআর্চা করছিলেন তিনি। গত কাল রাতে তাঁকে ২ হাজার টাকা দক্ষিণা দেন বনশল। জানিয়ে দেন, তাঁরা দিন দশ-পনেরো বাড়ি থাকবেন না। পরিচারিকাকেও বলে দেন, মঙ্গলবার তিনি যেন অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু দেরি করে কাজে আসেন। আজ সকাল কাজ করতে এসে পরিচারিকা দেখেন সদর দরজা খোলা। ভিতরে গিয়ে দু’টি ঘরে বাবা ও ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তিনি। পুলিশ জানায়, প্রাক্তন আমলার দেহটি ঝুলছিল তাঁর স্ত্রীর ঘরে। যোগেশের দেহ বোন নেহার ঘরে। ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় সুইসাইড নোটও। সেখানে সিবিআইয়ের হাতে ‘হেনস্থা’র অভিযোগ লিখেছেন বনশল। পাতাগুলির সঙ্গে জোড়া ছিল পারিবারিক অ্যালবামের ছবি।
আদালতে কাঁদতে কাঁদতে বনশল এক বার বলেছিলেন, ‘‘ছেলেটাও আত্মহত্যা করবে।’’ আজ সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, ‘‘এই ঘটনায় আমরা দুঃখিত। বনশলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিন্তু তাঁর ছেলে অভিযুক্ত নন। তাঁকে সিবিআই ডাকেওনি।’’