মহাত্মা গাঁধী (ইনসেটে উজ্জ্বল পারেখ)। —ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: এ দেশের রাজনীতিতে সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে একটা গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। সঙ্ঘকে ‘গাঁধী হত্যাকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন রাজনীতিকদের একাংশ। দেশ যখন গাঁধীজির দেড়শো বছর পালন করছে, তখন দেশের শাসন ক্ষমতায় সেই সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ দল বিজেপি। বিজেপির এক জন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী হিসেবে আপনি কি জবাব দেবেন ওই গুরুতর অভিযোগটার?
উজ্জ্বল: কোনও ভিত্তিহীন বা অবান্তর অভিযোগের জবাব দিতে চাই না। দেশের মানুষ সবই জানেন। বিজেপির ইতিহাসটাও কারও অজানা নয়। আমি শুধু বলতে পারি, আমি বা আমরা গাঁধীজিকে কী ভাবে দেখি, কী ভাবে তার মূল্যায়ন করি।
প্রশ্ন: কী ভাবে দেখেন গাঁধীজিকে? কী ভাবে তাঁর মূল্যায়ন করেন?
উজ্জ্বল: মহাত্মা গাঁধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এক জন অহিংস জননেতা এবং বিশ্ব জুড়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় পথপ্রদর্শক। মহাত্মা গাঁধীর অহিংসার বাণী সকলের প্রেরণা ও অনুসরণীয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে যতটা প্রাসঙ্গিক ছিলেন তিনি, আজও ততটাই।
প্রশ্ন: গাঁধীজির অহিংসার ধারণাকে আপনি অনুসরণীয় বলছেন। কিন্তু বিজেপি কি সত্যিই ওই ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী?
উজ্জ্বল: আপনার কী মনে হয়? বিজেপি কি সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী?
প্রশ্ন: সে প্রশ্নের উত্তর তো আপনারই দেওয়া উচিত। বিজেপির তরুণ পদাধিকারী আপনি। তরুণ সঙ্ঘপন্থীও বলা যেতে পারে। এই তরুণ প্রজন্মটার যে অংশ সঙ্ঘের নীতিতে বিশ্বাস রাখেন, তাঁরা গাঁধীজির অহিংস নীতিকে কী চোখে দেখেন? কোনও সারসংক্ষেপ রয়েছে আপনার কাছে?
উজ্জ্বল: গাঁধীজির লেখা থেকেই একটা অংশ তুলে ধরতে চাইব। অহিংসার ধারণা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “যখন আমি হতাশ হই, আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে। দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনো অপরাজেয় মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত তাঁদের পতনই ঘটে।''
প্রশ্ন: বিজেপি-র কাছেও গাঁধীজি অনুসরণীয় বলে আপনি দাবি করছেন ঠিকই। কিন্তু বিজেপি প্রায় ঘোষিত ভাবেই হিন্দুত্ববাদের সাধক। গাঁধীজির রাজনীতির সঙ্গে কী ভাবে মেলাবেন এই হিন্দুত্বকে? তিনি তো ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ বা পক্ষপাতিত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতেই দাঁড়িয়ে থেকেছেন চির কাল।
উজ্জ্বল: প্রথমত, হিন্দুত্ববাদ ভেদাভেদ বা পক্ষপাতিত্বের মতবাদ নয়। হিন্দুত্ব সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথাই বলে।
দ্বিতীয়ত, হিন্দুত্ববাদ সম্পর্কে গাঁধীজি কিন্তু ইতিবাচক কথাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘হিন্দুবাদ আমাকে পরিপূর্ণ ভাবে তৃপ্ত করে, আমার সম্পুর্ণ স্বত্ত্বাকে পরিপূর্ণ করে...। আমি ভগবত গীতার দিকে তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার একটি পঙ্ক্তি খুঁজে নিই... আমি ভগবত গীতার শিক্ষার কাছে কৃতজ্ঞ।’’
আরও পড়ুন: ‘হিন্দু হয়েও ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ব মোকাবিলার রাস্তা আছে, দেখিয়েছিলেন গাঁধী’
প্রশ্ন: একটা তুলনায় যাওয়া যাক। একটু অবান্তর তুলনা মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি যে ভাবে দাবি করছেন যে, গাঁধীজির নীতির সঙ্গে বিজেপির নীতির কোনও বিরোধ নেই, তাতে এই তুলনায় যেতেই হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর মতো এক জন ব্যক্তিত্ব এখন বিজেপির হৃদয়সম্রাট। মোদীর রাজনীতির সঙ্গে গাঁধীজির রাজনীতির কোনও মিল খুঁজে পান?
উজ্জ্বল: অবশ্যই পাই।
প্রশ্ন: একটু ব্যাখ্যা করবেন?
উজ্জ্বল: গাঁধীজি স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতির বিস্তার এবং ভারতীয়দের আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলতেন, নিজে চরকায় সুতো কাটতেন। এই স্বদেশি জাগরণের মধ্যে দিয়ে ভারতীয়দের সৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে স্বচেষ্ট ছিলেন।
আজ মোদীজি একই পথ নিয়েছেন। তিনিও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ডাক দিয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’, ‘জনধন যোজনা’র মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের আত্মনির্ভর করতে সচেষ্ট হয়েছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে দেশের কৃষকদের অর্থনৈতিক বিকাশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে ভারত সরকার।
গাঁধীজি স্বচ্ছতার কথা বলতেন। পারিপার্শিক পরিবেশ সুন্দর ও স্বচ্ছ হলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলে গাঁধীজি মনে করতেন।
আজকের স্বচ্ছ ভারত অভিযান কার উদ্যোগে শুরু হয়েছে, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
গাঁধীজি সৌভ্রাতৃত্বপূর্ন সহাবস্থান আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। মোদীজির মন্ত্রও একই—‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’।
প্রশ্ন: অর্থাৎ আপনি বলতে চান, গাঁধীজির সর্বোদয়ের ভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্র গ্রহণ করেছে বিজেপি?
উজ্জ্বল: একেবারেই তাই। কোনও সংশয় নেই।
প্রশ্ন: শুধুই কি মন্ত্র? নাকি তার বাস্তবায়নের চেষ্টাও রয়েছে?
উজ্জ্বল: দেখার চেষ্টা করলেই দেখতে পাবেন বাস্তবায়নের চেষ্টা রয়েছে কি না। মোদীজির সরকারের প্রকল্পগুলো দেখুন— ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’, ‘দীনদায়াল গ্রাম জ্যোতি যোজনা’, ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’, ‘অটল পেনশন যোজনা’, ‘বেটি বচাও, বেটি পঢ়াও’, ‘জন ঔষধি যোজনা’। সমাজের সব শ্রেণির বিকাশের ভাবনা নিয়েই কাজ করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।