রাজঘাটে গাঁধীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নরেন্দ্র মোদীর।
সকালে দু’পক্ষেরই শুরুটা হল রাজঘাটে। গাঁধীজির সমাধিতে নরেন্দ্র মোদী ফুল দিলেন। সনিয়া এবং রাহুল গাঁধীও শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলেন সেখানে। এর পরে কংগ্রেস এবং বিজেপির দুই প্রধান নেতাই ব্যস্ত হয়ে গেলেন গাঁধী জয়ন্তী উপলক্ষে নিজের নিজের কর্মসূচিতে।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সুরেই মোদী দিনভর নানা ভাবে নিজেকে গাঁধীর প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। আর রাহুল কংগ্রেসের কর্মসমিতির বৈঠক করলেন মহারাষ্ট্রের সেবাগ্রামে, গাঁধীর শেষ জীবনের আশ্রমে। মধ্যাহ্নভোজের পরে সনিয়া-রাহুল নিজেদের থালা নিজেরা ধুলেন। এ হেন গাঁধীগিরির পাশাপাশিই কংগ্রেস সভাপতি ফের বললেন যে, মোদীদের পক্ষে গাঁধীর উত্তরসূরি হওয়া অসম্ভব।
দিনভর যেন গাঁধীগিরিরই প্রতিযোগিতা!
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সকালেই জানিয়েছিল, নিকাশি ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তিক্ষেত্রই এ বারের গাঁধী জয়ন্তীতে মোদীর কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীরও জন্মদিন আজ। রাজঘাটের পরে বিজয়ঘাটে শাস্ত্রীজির সমাধিতেও শ্রদ্ধা জানান মোদী। একটু পরে রাজঘাটে পৌঁছন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘মহাত্মা গাঁধী আন্তর্জাতিক নিকাশি সম্মেলন’-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন তিনিই। সন্ত্রাসবাদকে ‘প্লেগ’-এর সঙ্গে তুলনা করে গাঁধীর অহিংসা নীতির তাৎপর্যের কথা মনে করিয়েছেন গুতেরেস।
শিশুসঙ্গ: আমদাবাদের সাবরমতী আশ্রমে। মঙ্গলবার।
ওই সম্মেলনেই মোদী বলেন, ‘‘পরিচ্ছন্ন পৃথিবী গড়তে চাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনতার অংশগ্রহণ।’’ অনুষ্ঠানের শেষে গাঁধীজির প্রিয় ভজন ‘বৈষ্ণব জন তো’-র একটি মিউজ়িক ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। ১২৪টি দেশের শিল্পীরা গেয়েছেন-বাজিয়েছেন এই ভিডিয়োয়। আগামী দু’বছর ধরে গাঁধীজির সার্ধশতবর্ষ পালন উৎসবের এ দিনই সূচনা করেছে কেন্দ্র। রাশিয়া, জাপান এবং নেদারল্যান্ডসে আজই গাঁধী-স্মরণে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ডাক বিভাগ।
গাঁধী-স্মরণে আজ দীর্ঘ ব্লগও লিখেছেন মোদী। তাতে বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ এবং ঘৃণা যখন দেশ আর সমাজের মধ্যে দেওয়াল তুলছে, তখন গাঁধীজির শান্তি-অহিংসার আহ্বানই পারে, মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ‘দেশে ভয়ের বাতাবরণ’-এর বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই মহারাষ্ট্রের ওর্ধায় আজ প্রায় ৫০ মিনিট পদযাত্রা করেছেন রাহুল। রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানিয়েই তিনি ও সনিয়া চলে আসেন মহারাষ্ট্রে। সেবাগ্রাম আশ্রম বা ‘বাপু কুটি’-তে ১৯৮৬ সালে একটি গাছ লাগিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী। বাবার লাগানো সেই গাছের পাশে আজ আরও একটি গাছ পোঁতেন রাহুল। ছিলেন মনমোহন সিংহও। আহমেদ পটেল টুইট করেন, ‘১৯৪২ সালের ১৪ জুলাই ওর্ধাতেই কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠক বসেছিল। ঔপনিবেশিক শাসকদের থেকে দেশকে উদ্ধারের ডাক দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। ২০১৮-র ২ অক্টোবর, সেখানেই ফের বৈঠক। ঘৃণা, হিংসা ও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধারের জন্য।’
এই আক্রমণের লক্ষ্য যিনি, সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা গেল দিল্লির বিড়লা হাউস, অধুনা ‘গাঁধী স্মৃতি ভবনে’ সর্বধর্ম প্রার্থনাসভায়। চলছে গান— ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম’। প্রথম সারিরও সামনে বসে নরেন্দ্র মোদী। আধবোজা চোখ। ঠোঁট নড়ছে।
ছবি: পিটিআই।