Ganga Drying

শুকিয়ে যাচ্ছে গঙ্গার জল! গত ১৩০০ বছরে ভয়াবহতম খরা, ‘নমামী গঙ্গে’র জনক মোদীর রাজ্যেরই আইআইটি রিপোর্ট

রিপোর্ট বলছে, ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দু’বার ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছিল গঙ্গায়। প্রথম বার ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭। দ্বিতীয় বার ২০০৪ থেকে ২০১০। খরা আগেও হত। কিন্তু এত ঘন ঘন খরা সাম্প্রতিক কালেই দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২৭
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে গঙ্গার জল। গত ১৩০০ বছরের ইতিহাসে এমন ভয়াবহতম অবস্থা দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক এই রিপোর্টে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এই নদীর উপর শুধু ভারত নয়, পড়শি দেশ নেপাল এবং বাংলাদেশও নির্ভরশীল। অন্তত ৬০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা টিকে রয়েছে এই নদীকে ঘিরে।

Advertisement

গঙ্গা নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আইআইটি গান্ধীনগর। ঘটনাচক্রে, গুজরাতের এই গান্ধীনগরেরই বাসিন্দা নরেন্দ্র মোদী, যিনি ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ‘নমামী গঙ্গে’ প্রকল্প শুরু করেছিলেন। প্রথম বার বারাণসী থেকে ভোটে দাঁড়ানোর পরে মোদী বলেছিলেন, ‘‘মা গঙ্গা আমাকে ডেকেছেন।’’ ভোটে জেতার পর তিনি গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে তার পুনরুজ্জীবনের শপথও নেন। কিন্তু গত দশ বছরে মোদীর ‘নমামী গঙ্গে’ নিয়ে বিস্তর প্রচার হলেও সেই পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ বলেই অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।

২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার দেশে ‘মিশন গঙ্গা’ প্রকল্প চালু করেছিল। মিশন গঙ্গা-র দু’টি লক্ষ্য ছিল। দূষণমুক্ত ‘নির্মল গঙ্গা’ এবং বাধাহীন স্রোতের ‘অবিরল গঙ্গা’। ‘নমামী গঙ্গে’ প্রকল্পে সেই অবিরল গঙ্গার লক্ষ্য বাদ যায়। জোর দেওয়া হয় মূলত গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে। মনমোহন সিংহের সরকার যে জাতীয় গঙ্গা নদী অববাহিকা কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছিলেন, সেটিকেও নাম বদলে হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে বিরোধীদের। ধীরে ধীরে সেই নদী অববাহিকাই শুকিয়ে যাচ্ছে বলে জানাল রিপোর্ট।

Advertisement

এই গবেষণায় আইআইটি গান্ধীনগরের সঙ্গে আমেরিকার অ্যারিজ়োনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও যুক্ত ছিলেন। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে। আইআইটি গান্ধীনগরের গবেষক দীপেশ সিংহ চুফল জানান, সপ্তদশ এবং উনিশ শতকে গঙ্গার অববাহিকায় যে খরা ভয়ঙ্কর খরা দেখা গিয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়ে আরও খারাপ। এই অবনতি শুরুই হয়েছে গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশক থেকে।

রিপোর্ট বলছে, ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দু’বার ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছিল গঙ্গায়। প্রথম বার ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭। দ্বিতীয় বার ২০০৪ থেকে ২০১০। খরা আগেও হত। কিন্তু এত ঘন ঘন খরা সাম্প্রতিক কালেই দেখা যাচ্ছে। খরার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বর্ষাকাল। বর্ষা ভাল না হলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। ১৯৫০ থেকে বর্ষা ক্রমে দুর্বল হয়েছে। ভারত মহাসাগরে উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে বদলে গিয়েছে বৃষ্টির ধরন। যার ফলে গঙ্গা অববাহিকায় বৃষ্টি কমেছে ১০ শতাংশ।

কিন্তু সাম্প্রতিক খরার কারণ মূলত মনুষ্যসৃষ্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্ষা দুর্বল হয়ে যাওয়া খরার প্রাথমিক কারণ। তবে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব খুবই কম। কিন্তু এই দুটো ঘটনা একই সঙ্গে লাগাতার ঘটতে থাকলে গঙ্গার শুকিয়ে যাওয়া ৫ থেকে ৩৫ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। এ ছাড়াও কৃষির জন্য যে হারে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে, তা-ও খরার বড় কারণ বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

তবে রিপোর্টে অনুমান, ২০৪০ সালের মধ্যে পরিস্থিতি খানিক বদলাবে। বৃষ্টির পরিমাণও বাড়়বে। কিন্তু শুধু এটুকুতেই গঙ্গার খরা কাটবে না। তার জন্য বিশেষ প্রকল্পও প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement