নিজের সাইবার ক্যাফে থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিকে ধরিয়ে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন গয়ার বাঙালি যুবক অনুরাগ বসু। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর সাইবার কাফেতে আসে ২০০৮ সালের অমদাবাদ বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের তৌসিফ খান ওরফে আতিক। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁকে গ্রেফতার করতে সাহায্য করেন অনুরাগ। বিহার সরকার স্রেফ ৩৫০০ টাকার পুরস্কার দিয়ে বিদায় করেছে অনুরাগকে! এমনকী পটনা থেকে গয়া, পুলিশের চক্করে ঘুরতে ঘুরতে বন্ধ হয়েছে তার সাইবার কাফেটিও। এখন গোটা বসু পরিবারই পড়েছে বিপাকে।
মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট অনুরাগ ও তাঁর পরিবারকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিহার সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর। পাশাপাশি, আর্থিক সহায়তা করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে খুব একটা হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের। নিরাপত্তা তো দূরের কথা, তাঁর সঙ্গে দেখা করার সময় হচ্ছে না বিহার পুলিশের কর্তাদের। তৌসিফের মাথার দাম ছিল পাঁচ লাখ টাকা। গয়াতে নতুন স্লিপার সেল তৈরির কাজ করছিল সে। এই অবস্থায় অনুরাগের সাহায্য ছাড়া তাকে গ্রেফতার করা এনআইএ বা বিহারের এসটিএফের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
বছর আটত্রিশের অনুরাগ গয়ার সিভিল লাইন থানার রাজেন্দ্র আশ্রম এলাকায় বিষ্ণু সাইবার কাফে খুলেছিলেন। সেখানে চার জন কর্মীও রেখেছিলেন তিনি। সেখানে এসেই ফেঁসে যান তৌসিফ। তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পরেই দোকানে কর্মরত কর্মীরা ভয়ে দোকান ছেড়ে চলে যায়। তদন্তের চক্করে গত কয়েক মাস ধরে গয়া আর পটনা ঘুরে চলেছেন অনুরাগ। ভাড়া না দিতে পাড়ায় সাইবার কাফে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়ির মালিক দোকান খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। বাচ্চাদের স্কুলের ফি দেওয়ার ক্ষমতাও এখন অনুরাগের নেই।
তাঁর কথায়, ‘‘তৌসিফের সঙ্গে স্থানীয় স্লিপার সলের কয়েক জন গ্রেফতার হওয়ায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’ তাঁর বক্তব্য, কোনও পুরস্কারের লোভে তিনি জঙ্গি ধরতে সাহায্য করেননি। কর্তব্য হিসেবেই করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু তার জেরে কাজ-কারবার শেষ হয়ে যাবে তা ভাবিনি।’’ পরিবারের সদস্যদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেকেই দোষী মনে করছেন অনুরাগ।