Galwan Valley

ভারত-চিন সঙ্ঘাতের কেন্দ্রবিন্দু গলওয়ান উপত্যকার নামের সঙ্গে জড়িয়ে কোন ইতিহাস?

গলওয়ান নদী ও উপত্যকার রুক্ষ ভূগোলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভিন্ন স্বাদের এক ইতিহাস।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ১৮:৩৮
Share:
০১ ১৪

ধূসর পাহাড় আর বরফ ঢাকা শৈল চূড়া। লাদাখের এই ল্যান্ডস্কেপের মধ্যে দিয়েই বয়ে চলেছে গলওয়ান নদী। যার উৎস কারাকোরাম পর্বতমালার পূর্ব অংশ। আকসাই চিন পেরিয়ে লাদাখের উপর দিয়ে গিয়ে শিয়ক নদীতে মিশেছে সেই ধারা। এই গতিপথের মধ্যেই আঁকা হয়েছে ভারত এবং চিনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)। সম্প্রতি দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সীমান্ত সঙ্ঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পূর্ব লাদাখের এই গলওয়ান উপত্যকা। ‘গলওয়ান’ শব্দের অর্থ ডাকাত। অর্থাৎ ডাকাতের উপত্যকা। ব্রিটিশ রাজত্বে ওই সব এলাকা লুঠেরাদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছিল। এই গলওয়ান নদী ও উপত্যকার রুক্ষ ভূগোলের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ভিন্ন স্বাদের এক ইতিহাস।

০২ ১৪

নয়াদিল্লি ও বেজিং দু’পক্ষের কাছেই স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এই গলওয়ান উপত্যকা। পৃথিবীর উচ্চতম সীমান্ত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম এই এলাকা। আর সে কারণেই ভূরাজনৈতিক দিক থেকে এই এলাকার গুরুত্ব ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৪

গত বেশ কয়েক দিন ধরেই গলওয়ান উপত্যকায় মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে ভারত এবং চিনের সেনা। সেনা স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকেও দু’পক্ষের সম্পর্কের বরফ গলেনি।

০৪ ১৪

সোমবার রাতে এই উপত্যকাতেই সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। তার পর থেকেই গলওয়ান উপত্যকার নাম উঠে আসছে বার বার।

০৫ ১৪

সওয়া শো বছর আগে গলওয়ান উপত্যকার নামকরণ করা হয়েছিল লাদাখেরই এক অভিযাত্রী গুলাম রসুল গলওয়ানের নামে। লাদাখ এবং আশপাশের এলাকা ছিল তাঁর নখদর্পণে। অনেকের মতে, ‘গলওয়ান’ শব্দের অর্থ যা বাস্তবে তাই পেশা ছিল গুলাম রসুলের। সেই গুলাম রসুলই ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছিলেন।

০৬ ১৪

আত্মজীবনী ‘সার্ভেন্ট অব সাহিবস’ বইতে একাধিক রোমহর্ষক অভিযানের কথা লিখেছেন গুলাম রসুল গলওয়ান। হিমালয়ের, তিব্বত বা ইয়ারখন্দে নানা অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন গুলাম রসুল। তারই নানা কাহিনি ধরা রয়েছে ওই বইতে।

০৭ ১৪

পাহাড়-পর্বতে নিত্যনতুন অভিযানে গুলাম রসুলের হাতেখড়ি মাত্র ১২ বছর বয়সে। পরিবারের অবস্থা হতদরিদ্র। তাই ওই বয়সেই স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডের দলে কুলি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন রসুল।

০৮ ১৪

১৮৯২-তে চার্লস মারে (সেভেন্থ আর্ল অব ডানমোর) এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট কর্নেলের সঙ্গে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন গুলাম রসুল। আর গলওয়ান নদীর নামকরণের কাহিনির সূত্রপাত সেই অভিযান দিয়েই। তখন গুলাম রসুলের বয়স মাত্র ১৪। ওই অভিযাত্রী দলটির লক্ষ্য ছিল, আজ যেটা গলওয়ান নদী তার উৎস খুঁজে বের করা।

০৯ ১৪

পথ তো নয় আকসাই চিনের রাস্তা যেন গোলকধাঁধা। বিষফোঁড়া খারাপ আবহাওয়া। এই দুইয়ের জেরে ভিনদেশী মানুষের পথ হারানোই সেখানে দস্তুর। সব আশঙ্কা সত্যি করেই ওই এলাকায় রাস্তা ভুল করে অন্য পথে চলে যায় চার্লস মারের ক্যারাভ্যান।

১০ ১৪

এক দিকে খাদ, অন্য দিকে গিরিবর্ত্ম। দুর্গম এলাকায় পথ হারিয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন চার্লস মারে এবং তাঁর দলবল।

১১ ১৪

কার্যত মরতে বসেছিল অভিযাত্রীদের দলটি। শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখান ১৪ বছরের বালক গুলাম রসুলই। ওই দুর্গম এলাকার ভিতর দিয়েই সহজ পথ খুঁজে বের করেন তিনি।

১২ ১৪

রসুলের দেখানো রাস্তায় এসে একটি নদীর তীরে পৌঁছয় ওই অভিযাত্রী দলটি। ১৪ বছরের ওই কিশোর রসুলের গুণে অভিযাত্রী দলের নেতা চার্লস মারে এতটাই মুগ্ধ হন যে ওই নদীর নামকরণ করেন ‘গলওয়ান নালা’। আর তার পর থেকে ওই উপত্যকা ও নদী গলওয়ান নামেই পরিচিত।

১৩ ১৪

কুলি বা টাট্টু ঘোড়া চালকের পেশা দিয়ে জীবন শুরু করে লেহ-র ব্রিটিশ জয়েন্ট কমিশনারের প্রধান সহকারী পর্যন্ত হয়েছিলেন গুলাম রসুল। কিন্তু লাদাখের ওই পাহাড়, নদী, গিরিখাত তাঁকে টানত। তাই থিতু হওয়া হয়ে ওঠেনি। একের পর এক অভিযানে সামিল হয়েছিলেন তিনি। পথই ছিল তাঁর এক মাত্র নেশা।

১৪ ১৪

মাত্র ৪৭ বছর বেঁচে ছিলেন রসুল। কিন্তু লাদাখের ওই বেপরোয়া অভিযাত্রীর নামের সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে গলওয়ান উপত্যকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement