অসমে নির্বাচনী প্রচারে অমিত শাহর সঙ্গে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সর্বানন্দ সোনোয়াল। ছবি: পিটিআই
অসমে নির্বাচনী প্রচারে এসে বয়সের প্রশ্নে গত কাল তরুণ গগৈয়ের দিকে তোপ দেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ঠিক একই কায়দায় অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধলেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
এ দিন রাজ্যে নির্বাচনী জনসভা করতে এসে তিনি বলেন, ‘‘যখনই গগৈকে দেখি খুব ক্লান্ত লাগে।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে অমিতের পরামর্শ— ‘‘আপনার বয়স হয়েছে। ক্লান্ত হয়েছেন। এ বার বিশ্রাম নিন। যুবক সর্বানন্দকে কাজ করার সুযোগ দিন।’’
উল্লেখ্য, গত কাল মোদীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গগৈ বলেছিলেন, ‘‘আমার বয়স বাড়লেও কাজ করার ক্ষমতা ও ইচ্ছা যুবকদের মতোই।’’
অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি আর অনুন্নয়নের কথা তুলেও কংগ্রেসের দিকে তোপ দাগেন অমিত। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপি জোটের সরকার ক্ষমতায় এলে সীমান্ত পুরো সিল করে দেওয়া হবে। তাড়ানো হবে বাংলাদেশিদের। বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা অসমে ভূমিপুত্রদের জমি ও চাকরি কাড়ছে। ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে তাদের মদত দিচ্ছে কংগ্রেস।’’
ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পার ও উজানি অসমে চা শ্রমিকদের বিকাশে বিস্তর প্রতিশ্রুতি দেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস শুধু চা শ্রমিকদের শোষণ করে সুবিধা নিয়েছে। তাঁদের দিকে নজর দেয়নি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে চা শ্রমিকদের দিন বদলে বিশেষ নজর দেবে।’’ বন্যা ও ভূমিক্ষয়ে বিধ্বস্ত লখিমপুর, ধেমাজির মানুষকে শাহ আশ্বাস দেন, ক্ষমতায় এলে বিজেপি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ওই দুই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অগ্রাধিকার দেবে।
শাহের দাবি, স্বাধীনতার পরে জওহরলাল নেহরু অসমকে দ্বিতীয় শ্রেণির রাজ্যের তালিকায় ঢোকান। মহাত্মা গাঁধী ও গোপীনাথ বরদলৈয়ের মতো নেতাদের জন্য সে যাত্রায় অসমের মান বাঁচে। চিনের ভারত আক্রমণের সময়ও নেহরু অসম বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। সেনাদের বীরত্বে বাঁচে অসম। অমিতের মন্তব্য, ‘‘সেই পরিবারই এখনও কংগ্রেসকে চালাচ্ছে। ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে তরুণ গগৈ অসমকে বঞ্চিত করে শুধু নিজের ছেলেকে সাংসদ বানিয়ে নিয়েছেন।
১৫ বছর রাজ্যের সাংসদ আর ১০ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার পরেও মনমোহন সিংহ অসমের কোনও উন্নতি করেননি।’’ অমিতের বক্তব্য, রাজ্যে ১ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। ৩৬ শতাংশের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। অথচ অনুন্নয়নের ছবি তুলে ধরলেই গগৈ বলছেন বিজেপির চোখে ছানি পড়েছে। বিজেপি সভাপতির কথায়, ‘‘গগৈ নিজের ছেলেকে বিদেশে পড়ান, অথচ রাজ্যে ভাল শি ক্ষার ব্যবস্থা করেননি। তাই, এখানকার ছেলেমেয়েদের বাইরের রাজ্যে গিয়ে পড়তে হয়।’’
কংগ্রেসের সঙ্গে এআইইউডিএফের গোপন বোঝাপড়া আছে দাবি করে অমিত বলেন, ‘‘গগৈ আর বদরুদ্দিন সকালে শুধু যুদ্ধ-যুদ্ধ নাটক করেন। রাতে দু’জন কাছাকাছি আসেন। সনিয়া-রাহুল কোনও দিন সীমান্ত পুরো সিল করবেন না। বিজেপি তা করবে। কারণ অনুপ্রবেশ শুধু রাজ্য নয় দেশের পক্ষেও আশঙ্কার।’’
এ দিন সকাল থেকে গোটা রাজ্যে আকাশের মুখ কালো। তাই ঢকুয়াখানা, নাওবৈচা, সুতিয়া, থাওরা ও মরাণের জনসমাবেশে অমিত শাহের হেলিকপ্টার
পৌঁছতে সময় বেশি লাগে। মন্দ আবহাওয়া উপেক্ষা করে ভিড় জমেছিল সব সভাতেই।