প্রয়াত গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকর

বিবার রাত আটটা নাগাদ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দফতর সূত্রে ঘোষণা করা হয়, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

পানজিম শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩৮
Share:

মনোহর পর্রীকর। —ফাইল চিত্র।

অনেক দিনই ভুগছিলেন অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে। গত ক’দিন ধরে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। রবিবার রাত আটটা নাগাদ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দফতর সূত্রে ঘোষণা করা হয়, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের মৃত্যু হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৬৩। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের সব স্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। আগামিকাল দেশ জুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কালই শেষকৃত্য হবে।

Advertisement

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ক্যানসার ধরা পড়ে পর্রীকরের। অসুস্থ শরীর নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে বিরোধীরা সরব হলেও গোয়ায় বিজেপির ‘ক্রাইসিস ম্যান’কে রেহাই দেননি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ দিন পর্রীকরের মৃত্যুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই একে ‘রাজনৈতিক ভাবে’ কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। টুইটারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অমিত পর্রীকরের অসুস্থ অবস্থার ছবি ব্যবহার করায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। শোকবার্তায় সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ টানা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পর্রীকরকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গোয়ার মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে কেন্দ্রে যেতে প্রথমে রাজি ছিলেন না তিনি। শেষে নরেন্দ্র মোদীর অনুরোধে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তাঁর সময়েই বিতর্কিত রাফাল চুক্তি সই হয়। সেই সময় তাঁর মন্ত্রকের ভূমিকা অস্বস্তি বাড়ায় মোদীর। ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির খারাপ ফল তাঁকে গোয়ায় ফিরিয়ে আনে। মোদী সরকারও স্বস্তি পায়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাফাল নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে অনেকে অনেক কথা বললেও বরাবরই সঙ্ঘের একনিষ্ঠ সৈনিক পর্রীকর এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বরাবরই অভিযোগ করে এসেছেন যে, মোদী তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্রীকরকে এড়িয়ে রাফাল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং পর্রীকরের মন্ত্রক ওই পদ্ধতির বিরোধিতাও করেছিল। পর্রীকরের বাসভবনে রাফালের ফাইল রয়েছে বলে দাবি করা একটি অডিয়ো ক্লিপ তিনি সামনে এনেছিলেন। কিছু দিন আগে অসুস্থ পর্রীকরের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন তিনি। গত মাসে রাফাল চুক্তি নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক রিপোর্টেও দাবি করা হয়, ওই চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নাক গলানো নিয়ে আপত্তি তুলেছিল পর্রীকরের মন্ত্রক। পর্রীকর নিজে অবশ্য ইদানীং বিতর্ক এড়িয়েই চলছিলেন। রাহুল তাঁর সঙ্গে দেখা করে যাওয়ার কথা রাফাল বিতর্কের প্রসঙ্গে উল্লেখ করলে, তাঁর সৌজন্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পর্রীকর। সে চিঠির পিছনেও দলের চাপ রয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন। রাহুল নিজেই পাল্টা খোলা চিঠি লিখে দাবি করেন, পর্রীকরকে চাপ দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

পর্রীকরের মৃত্যুতে সঙ্কটে গোয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। এক বিজেপি বিধায়কের মৃত্যু এবং পর্রীকরের শারীরিক অবস্থার অবনতি— এই দু’টি বিষয়কে সামনে রেখে গত কালই গোয়ায় সরকার গড়তে চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দেয় রাজ্যের একক বৃহত্তম দল কংগ্রেস। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগম্বর কামাথের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা পরিস্থিতি বদলে দেয়। কামাথ বিজেপিতে যোগ দিলে অসুস্থ পর্রীকরের বদলে তিনিই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বলে আলোচনা শুরু হয় বিজেপিতে। তাতে ইন্ধন দিয়ে গোয়ায় বিজেপি নেতা দয়ানন্দ মাণ্ডরেকর জানান, মুখ্যমন্ত্রীর শরীর ঠিক থাকলে নেতা বদল নিয়ে আলোচনাই হত না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত, এ বার বিষয়টি ভাবা। রাজ্য বিজেপি নেতা তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার মাইকেল লোবো জানান, কামাথের বিজেপিতে যোগদান এবং মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে দলে আলোচনা হয়েছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কামাথ নিজে অবশ্য বিজেপির দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপিতে গেলে রাজনৈতিক ভাবে আত্মহত্যা করা হবে।’’ রাজ্য কংগ্রেসও তাঁর দলত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দাবি করেছে, পুরোটাই বিজেপির রটনা। আজ আরও এক বার রাজ্যপালকে চি‌ঠি দিয়েছে কংগ্রেস।

২০১৭-র গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সেখানে পর্রীকরের সৌজন্যেই সরকার গঠন করে বিজেপি। তিন নির্দল বিধায়ক জানিয়ে দেন, পর্রীকর মুখ্যমন্ত্রী হলে তবেই তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করবে। তার পরেই গোয়ায় কংগ্রেসকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে বিজেপি পর্রীকরকে গোয়ায় ফিরিয়ে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন