আমলাদের সেই ‘হিম্মত’ কোথায়

শনিবার কলকাতায় এমনই অভিযোগ করলেন দেশের প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব তথা প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০৪:১২
Share:

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় আমলাদের অনেকেই ভীত, সন্ত্রস্ত। শনিবার কলকাতায় এমনই অভিযোগ করলেন দেশের প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব তথা প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার।

Advertisement

ইন্দিরা গাঁধীর আমলে দাপুটে আমলা পি এন হাকসারের কাজকর্ম বিশ্লেষণ করে বই লিখেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। শনিবার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশেন (ওআরএফ)-এ সেটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে জহরবাবু বলেন, ‘‘সব ক্ষমতা এখন কেন্দ্রীভূত। কোনও আমলা এখন ভিন্নমতও পোষণ করতে পারেন না।’’ এমনকি, এ রাজ্যেও কারও কিছু বলার হিম্মত নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এমনটা শুনে শুধু মিটিমিটি হাসলেন এ রাজ্যের আইএএস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জীব চোপড়া। তাঁর জবাব, ‘‘এ রাজ্যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে (সিএমও) কাজ করিনি। ফলে অভিজ্ঞতা নেই। তবে জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে আমলাতন্ত্রে ‘ল্যাটারাল এন্ট্রি’ নিয়ে আপত্তি রয়েছে।’’ নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন জয়রাম রমেশও। তাঁর কথায়, ‘‘ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করাটা অন্যায় নয়। আমার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তা বলে আমি ভিন্নমত শুনব না, এটা ঠিক নয়। আমি সব মত শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সংস্কৃতি উঠে গিয়েছে।’’

Advertisement

আর তাই আমলারা এখন কোনও ‘উচিত’ কথা সরকারকে জানাচ্ছেন না বলেও মনে করেন দেশের প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব। জহরবাবুর কটাক্ষ, ‘‘আমলাদের পেশাদারি পরামর্শ থেকে এই ভদ্রলোক (মোদী) তো বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন। যদি এক জনও মেরুদণ্ড সিধে রেখে বলতে পারতেন, ‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভুল।’ তা হলে তাঁকে এত বড় ধাক্কা সামলাতে হত না।’’

জয়রামের বই কিন্তু বলছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে হাকসার কী ভাবে বারবার লড়ে গিয়েছিলেন ইন্দিরার সঙ্গে। লেখকের মতে, রাষ্ট্রদূতের চাকরি থেকে আইএএস হিসাবে সম্ভবত প্রথম ‘ল্যাটারাল এন্ট্রি’ পেয়ে পিএমও-তে আসেন হাকসার। রাজনৈতিক পরামর্শ দান, এমনকি ইন্দিরাজির স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন আপোসহীন— এমনই মত প্রাক্তন মন্ত্রীর। ইন্দিরা-হাকসারের যুগলবন্দি ছিল পাক্কা ১০ বছরের— ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭। ১৯৭৩-এর পরে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয় দু’জনের। কিন্তু তার আগে কংগ্রেসের বিভাজন থেকে শুরু করে টাকার অবমূল্যায়ন, বাংলাদেশের যুদ্ধ, ভারত-রাশিয়া চুক্তি, সবুজ বিপ্লব, গরিবি হঠাও, শিমলা চুক্তি, ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ, পোখরানে প্রথম পরমাণু পরীক্ষা, ইসরো-র প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ সব অধ্যায়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইন্দিরা-হাকসার। পরে অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানায় ব্রজেশ মিশ্রই ক্ষমতা ও প্রভাবে হাকসারের সমতুল ছিলেন বলে মনে করেন জয়রাম।

এখন নোট না-লেখা বা মেপে লেখার জমানায় হাকসারের মতো আমলা ব্যতিক্রম বলেই মত জহর সরকার, সঞ্জীব চোপড়াদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement