আমলাদের জন্য রক্ষাকবচ, দুর্নীতির শাস্তি আরও কড়া

দুর্নীতির তদন্তের ভয়ে সরকারি আমলারা যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে পিছিয়ে না আসেন, সে জন্য অবসরের পরেও তাঁদের রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ দুর্নীতি দমন আইনে একগুচ্ছ সংশোধনীতে সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই সংশোধনীতে এক দিকে দুর্নীতিকে ‘জঘন্যতম অপরাধ’-এর তালিকায় এনে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

দুর্নীতির তদন্তের ভয়ে সরকারি আমলারা যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে পিছিয়ে না আসেন, সে জন্য অবসরের পরেও তাঁদের রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

আজ দুর্নীতি দমন আইনে একগুচ্ছ সংশোধনীতে সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই সংশোধনীতে এক দিকে দুর্নীতিকে ‘জঘন্যতম অপরাধ’-এর তালিকায় এনে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তেমনই দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সিবিআইয়ের পক্ষে কোনও সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুকরাও আরও কঠিন করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও সরকারি আমলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা সুপারিশের ক্ষেত্রে অপরাধ হয়ে থাকলে,তাঁর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আগে তদন্তকারী সংস্থাকে বাধ্যতামূলক ভাবে লোকপাল অথবা লোকায়ুক্তর অনুমতি নিতে হবে। অবসর বা পদত্যাগের পরেও এই রক্ষাকবচ থাকবে। তবে এর সুবিধা নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারা যাতে পার না পেয়ে যান, তার জন্য আইনে সরকারি অফিসারদের দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত বিষয়গুলিও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

মনমোহন সিংহের জমানায় একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ উঠেছিল। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসে তাই আমলাদেরনির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তার পরেও আমলাদের ভয় কাটেনি। কয়লা খনি বন্টন দুর্নীতিতে যে ভাবে প্রাক্তন কয়লাসচিব পি সি পরাখের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হয়েছে বা তাঁকে আদালতের সমন পাঠানো হয়েছে, তার পরে সেই আতঙ্ক আরও জাঁকিয়ে বসেছে। দু’দিন আগেই তাই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সিবিআইয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছিলেন, অনিচ্ছাকৃত ভুল ও দুর্নীতির মধ্যে ফারাক করা প্রয়োজন। আজ দেশের স্বার্থের কথা ভেবে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত পরে ভুল প্রমাণিত হতেই পারে। তার মানেই সেটা দুর্নীতি নয়। কিন্তু আর্থিক উদারীকরণের আগের তৈরি ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি দমন আইন এ সবের মধ্যে ফারাক করতে পারে না। সেই কারণে এই আইনে সংশোধনী প্রয়োজন। আজ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পরে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘যত ক্ষণ না দেখা যাচ্ছে যে কোনও আমলা একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে সুবিধা পেয়েছেন, তত ক্ষণ যাতে সিবিআই তাঁকে হেনস্থা করতে না পারে, সেই ব্যবস্থাই করতে চাইছি। ওই আমলা বা তাঁর পরিবারেরআয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির খোঁজ পেলেই বোঝা যাবে, তিনি সুবিধা পেয়েছেন।’’

Advertisement

মন্ত্রিসভা যে দুর্নীতি দমন আইন সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিয়েছে, তাতে যারা ঘুষ নিচ্ছে, তাদের পাশাপাশি যারা ঘুষ দেবে, তাদেরও শাস্তির বিধান করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তি বা বাণিজ্যিক সংস্থা সরকারি আমলাকে ঘুষের লোভ দেখালে, তা-ও অপরাধের তালিকায় পড়বে। সরকারের যুক্তি, এতে ঘুষের জোগানে পাঁচিল তোলা যাবে। শুধু আর্থিক ঘুষ নয়, অন্য কোনও সুবিধা পাইয়ে দেওয়াও দুর্নীতির তালিকায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

দুর্নীতির অপরাধে ন্যূনতম শাস্তি ছয় মাস কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। একই ভাবে সর্বোচ্চ শাস্তির ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের মেয়াদ পাঁচ থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে। দুর্নীতির মামলা আদালতে বহু দিন ঝুলিয়ে না রাখতে দু’বছরের মধ্যে শুনানি শেষ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দুর্নীতি করে আয় করা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার জেলা আদালতের বদলে বিশেষ আদালতের বিচারকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই এই বিলটি রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন