জমি আইন সংস্কারের ভার রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে পরিত্রাণের পথ খুঁজছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু বিলটি নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের চাপে সেই পরিকল্পনাও কতটা সফল হবে, তা নিয়ে এখন সংশয়ে শাসক শিবির!
আগামী ৩ অগস্ট জমি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির চূড়ান্ত পিরোর্ট পেশ করার কথা। কিন্তু আজ কংগ্রেস তৃণমূল, বিএসপি, জেডিইউ বিলটির বিরোধিতায় সরব হয়েছে, তাতে চলতি অধিবেশনে জমি বিলটি পাশ হওয়া দূর, যৌথ কমিটির রিপোর্ট পেশ হওয়া নিয়েই চিন্তায় শাসক দল।
জমি বিল নিয়ে জটিলতা কাটাতে ওই আইন বাস্তবায়নের দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিতে চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সরকারের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে আজ ফের কংগ্রেসের তরফে ২০১৩ সালের আইনটিকেই ফেরানোর পক্ষে সওয়াল করা হয়। জমি বিল প্রশ্নে প্রথম থেকেই সুর চড়িয়ে রাখা তৃণমূলও আজ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সরব হয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সবক’টি সংশোধনীতেই আপত্তি জানিয়ে সেগুলি বাতিলের পক্ষে সওয়াল করেন।
সুর চড়িয়েছে বসপাও। তাদের দাবি, যে শিল্প করিডর নির্মাণের যুক্তি দেখিয়ে তড়িঘড়ি সরকার ওই আইন আনার কথা বলছে, বাস্তবে এই ধরনের কোনও শিল্প করিডরের অস্তিত্বই নেই! পরিবর্তে রয়েছে সাতটি শিল্প জোন। বসপা-র যুক্তি, ওই জোনগুলিতে বেসরকারি সংস্থাকে জমি পাইয়ে দেওয়ার স্বার্থেই ওই আইন আনা হচ্ছে। পিছিয়ে নেই জেডিইউ নেতৃত্বও। সামনেই বিহার নির্বাচন। কৃষকদের থেকে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিকে সামনে রেখে সরব হয়েছেন তাঁরাও।
অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারের নির্বাচন ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকেও। ওই নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশটি পাশ করানোর চেষ্টা করা হলে কৃষকদের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে বলেই মনে করছে বিজেপির একাংশ। এমনিতেই দলের একাংশের ধারণা, জমি নিয়ে মোদী-সরকারের গায়ে কৃষক-বিরোধী তকম সেঁটে দিতে কিছুটা সফল বিরোধীরা। বিহার ভোটের আগে এ নিয়ে তারা আরও সুর চড়ালে আখেরে ক্ষতি হবে বিজেপিরই। যার ফায়দা তুলবেন নীতীশ কুমার-লালু প্রসাদরা। তাই বিহার বিজেপির নেতারা জমি বিলের প্রশ্নে ‘ধীরে চলো’ নীতিরই পক্ষে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, তা মানছে বিজেপি। এমনিতেই সুষমা স্বরাজ-বসুন্ধরা রাজে-শিবরাজ সিংহ চৌহান প্রশ্নে তুমুল অস্বস্তিতে দল। সুষমার ইস্তফার দাবিতে সংসদের প্রথম সপ্তাহ কার্যত অচল করে রাখতে সফল বিরোধীরা। ফলে পরিবর্ত রণকৌশল হিসেবে বিজেপি শিবির চাইছে, বাদল অধিবেশনে রিপোর্টটি সংসদে পেশ করুক যৌথ সংসদীয় কমিটি। তার পরে শীতকালীন অধিবেশনে সেটি পাশ করানোর জন্য সক্রিয় হবে দল। তত দিনে বিহারে নির্বাচনও শেষ হয়ে যাবে। ফলে সেই সময়ে ওই বিলটি পাশ করানোর প্রশ্নে তেড়েফুঁড়ে নামতে পারবে দল।