নিহত নিকি ভাটি। — ফাইল চিত্র।
মৃত্যুর ছ’মাস আগেও অত্যাচারের চোটে শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছিলেন নিকি ভাটি। পঞ্চায়েতের মধ্যস্থতায় সে বার তাঁকে ফেরানো হয়। গ্রেটার নয়ডায় পণের দাবিতে বধূহত্যা কাণ্ডে এ বার এমনটাই জানালেন মৃতার দিদি।
সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বোনের মৃত্যুর বিষয়ে নানা নতুন তথ্য জানিয়েছেন দিদি কাঞ্চন। ২০১৬ সালে ভাটি পরিবারের দুই ছেলে রোহিত ও বিপিনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কাঞ্চন ও নিকির। বিয়েতে যথেষ্ট যৌতুকও দেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে মন ভরেনি শ্বশুরবাড়ির পরিজনদের। অভিযোগ, আরও পণের দাবিতে প্রায়ই মারধর করা হত নিকি ও কাঞ্চনকে। ভিডিয়োয় কাঞ্চন বলেন, ‘‘সামাজিক চাপের কারণে নিকি অনেক কিছু সহ্য করত। ওর সাত বছরের এক ছেলে রয়েছে। তাই মুখ বুজেছিল। ও আশা করেছিল, আজ না হোক কাল সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন বুঝতে পারিনি এমন হবে!’’
কাঞ্চন জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন নিকি। দাদরিতে ফিরে গিয়ে বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন। সে বার নিকি ও বিপিনের মধ্যে ‘মিটমাট’ করাতে পঞ্চায়েত সভা ডাকা হয়। সেখানে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান বিপিন। প্রতিশ্রুতি দেন, আর কখনও স্ত্রীর গায়ে হাত তুলবেন না। স্বামীর কথায় ভুলে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান নিকি। অভিযোগ, এর দিন কয়েক পর থেকেই ফের শুরু হয়ে যায় নির্যাতন।
কাঞ্চনের কথায়, ‘‘এখন যে পদক্ষেপগুলি করা হচ্ছে, তা যদি ১১ বা ১২ ফেব্রুয়ারি করা হত, তা হলে হয়তো এই দিন দেখতে হত না! আসলে সমাজের কথা ভেবে আমরা অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ জানা গিয়েছে, দুই মেয়ের বিয়েতে সাধ্যমতো যৌতুক দিয়েছিল নিকিদের পরিবার। স্করপিয়ো গাড়ি, এনফিল্ড বাইক, নগদ, সোনা— নানা উপহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুশি ছিলেন না। আরও পণ চেয়ে প্রায়ই দুই বোনকে মারধর করা হত। নিকি ও কাঞ্চন মিলে একটি পার্লার চালাতেন, রিল ভিডিয়ো বানাতেন। সে সব পছন্দ ছিল না ভাটি পরিবারের। তাঁদের উপার্জনও কেড়ে নেওয়া হত বলে দাবি। গত বৃহস্পতিবারও নিকিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তার পর গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কাঞ্চন বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয় তাঁকেও। বোনের নৃশংস খুনের প্রত্যক্ষদর্শী কাঞ্চন বৃহস্পতিবারই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিমধ্যে বিপিন, শাশুড়ি দয়া, শ্বশুর সত্য বীর এবং কাঞ্চনের স্বামী রোহিতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।