চঞ্চলা সিংহ।- নিজস্ব চিত্র।
মেরি কম হতে চায় চঞ্চলা সিংহ।
এমনই স্বপ্ন দেখে হাইলাকান্দির প্রান্তিক শহর লালার সাধারণ ঘরের ওই কিশোরী। পরিবারে খেলাধুলো, নাচ-গানের পরিবেশ। নাচ ভালবাসে চঞ্চলাও। কিন্তু তার মন পড়ে খেলার দুনিয়াতেই। এক সময় লালার ‘হুয়েন লালং লালা থাংথা’ সংস্থায় মার্শাল আর্ট শিখত সে। তার পর হাতে তুলে নেয় তলোয়ার। ফেন্সিং শিখতে ভর্তি হয় গুয়াহাটির ‘সাই’ শিবিরে। তার সঙ্গে সেখানে ওই খেলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বড়বোন কে বিজয়লক্ষ্মী। একইসঙ্গে রাজধানীর বি বড়ুয়া কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে সে। পড়াশোনার ফাঁকে অংশ নেয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় স্তরের ১০টি প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে চঞ্চলা। এ বছর ভারতীয় ফেন্সিং দলে মনোনীত হয় সে। ভারতীয় ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাজেন্দ্র সিংহ রানা ‘অসম ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশন’কে এ খবর জানিয়েছেন। রানা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ককে ‘থাইল্যান্ড ওপেন ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় দলের সদস্য থাকবে বছর সতেরোর ওই কিশোরী।
এতে স্বপ্নটা হাতের মুঠোয় নেওয়ার আশায় রয়েছে চঞ্চলা। মেরি কমের মতো অলিম্পিকে পদক জিততে চায় সে। ২৫-৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্ককে বসবে ওই প্রতিযোগিতার আসর।
চঞ্চলা ভারতীয় দলে মনোনীত হওয়ার খবরে খুশি হাইলাকান্দি–লালার বাসিন্দারা। অনেকেই তার বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আজ লালার এস পি রোডে চঞ্চলার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা কে বীরেন সিংহ এবং মা উরিবাইকে নিয়ে দু’বোনের সংসার। বাবা ছোট সোনার দোকানের কারিগর। চঞ্চলা জানায়, ঠাকুমাকে কথা দিয়েছেন সোনার পদক জিতে তাঁর গলায় পরাবেন। সে আরও জানায়, এর আগে ২০১১ সালে পুনেতে ‘অল ইন্ডিয়া ইন্টার রিজিওনাল সাই বি এস সি’ প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছে। সে বছরই কটকে জুনিয়র ফেন্সিং প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। ২০১২ সালে গ্বালিয়রে ‘নবম ক্যাডেট ন্যাশনাল ফেন্সিং প্রতিযোগিতা’ ও ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে জাতীয় ফেন্সিং প্রতিযোগিতায় সবার নজর কাড়েন। ২০১৩ সালে তিনসুকিয়ায় আন্তঃজেলা ফেন্সিং প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। সব মিলিয়ে সে ইতিমধ্যেই জাতীয় স্তরের ১০টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এ বার প্রথম বিদেশের মাটিতে পদক জিততে তলোয়ার হাতে যুদ্ধে নামবে ওই অসম-কন্যা। তার ‘পাখির চোখ’ সোনার পদকটাই।
চঞ্চলার কথায়, ‘‘যে দিন মেরি কমের মতো অলিম্পিকের পদক জিতে বাড়ি ফিরব, সে দিনই আমার লক্ষ্যপূরণ হবে।’’