রায় হাইকোর্টের

চার বছর বন্ধ থাকার পর মুম্বইতে হাজি আলির দরজা খুলল মহিলাদের জন্য

চার বছর ধরে তাঁদের জন্য বন্ধ ছিল দরজা। আজ বম্বে হাইকোর্ট রায় দিয়ে জানাল, এ বার থেকে মহিলারাও যেতে পারবেন হাজি আলি দরগার কেন্দ্রস্থলে। ২০১২ সাল থেকে মহিলাদের দরগার কেন্দ্রস্থলে ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেয় হাজি আলির অছি পরিষদ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

দরগার কেন্দ্রস্থলে ঢুকতে পারবেন মেয়েরা। আদালতের রায় শোনার পর উচ্ছ্বাস। মুম্বইয়ে পিটিআইয়ের ছবি।

চার বছর ধরে তাঁদের জন্য বন্ধ ছিল দরজা। আজ বম্বে হাইকোর্ট রায় দিয়ে জানাল, এ বার থেকে মহিলারাও যেতে পারবেন হাজি আলি দরগার কেন্দ্রস্থলে।

Advertisement

২০১২ সাল থেকে মহিলাদের দরগার কেন্দ্রস্থলে ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেয় হাজি আলির অছি পরিষদ। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলারই আজ রায় দিয়েছে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি ভি এম কানাড়ে এবং বিচারপতি রেবতী মোহিতের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিরা রায়ে বলেছেন, ধর্মস্থানে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার অর্থ, ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ২৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করা। ওই ধারাগুলিতেই স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভারতে বসবাসকারী যে কোনও মানুষের নিজের ইচ্ছেমতো ধর্মাচরণের মৌলিক অধিকার রয়েছে। কোনও প্রকাশ্য ধর্মস্থানে প্রবেশ করা থেকে মহিলাদের আটকানোর কোনও অধিকার নেই অছি পরিষদের। দরগায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

কোর্ট নিজেই অবশ্য এই রায় কার্যকর করার উপরে ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করেছে। কারণ, অছি পরিষদ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিষদের সদস্য হাজি রাফতের বক্তব্য, ‘‘হাইকোর্টের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত হয়নি। তবে সেটা যখন হয়েই গিয়েছে, তখন ঠিক করেছি সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’

Advertisement

২০১২ সালে হাজি আলির কেন্দ্রস্থলে মহিলাদের প্রবেশ আচমকা নিষিদ্ধ হওয়ার পর জনস্বার্থ মামলাটি করেছিল ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’ নামে একটি সংস্থা। অছি পরিষদের যুক্তি ছিল, পুরুষ ধর্মগুরুর সমাধিস্থলের কাছাকাছি কোনও মহিলাকে যেতে দেওয়াটা ইসলামে পাপের নামান্তর। এর সমর্থনে কোরানের কিছু পংক্তিও উদ্ধৃত করেছিল তারা। কিন্তু আদালত বলেছে, ‘‘এগুলো যথেষ্ট যুক্তি নয়, বিশেষত যখন ২০১২ পর্যন্ত দরগার কেন্দ্রস্থলে মহিলাদের যেতে দেওয়া হতো। তা ছাড়া, এই উদ্ধৃতিগুলিতেও এমন কিছু নেই যাতে বলা হচ্ছে, মসজিদ বা দরগায় মহিলাদের প্রবেশ করাটা অপরাধ।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অছি পরিষদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর জনৈক নূরজহান নিয়াজ বলেছিলেন, ‘‘যে পুরুষ ধর্মগুরুর সমাধির সামনে যাওয়া থেকে আমাদের আটকানো হচ্ছে, তিনি কি কোনও মহিলার গর্ভে জন্মাননি?’’ ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’-এর তরফে আইনি লড়াইটা মূলত লড়েছেন এই নূরজহান এবং জাকিয়া সোনম। আজ স্বভাবতই খুশি জাকিয়া মনে করছেন, এই রায় নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটা বড় পদক্ষেপ। রায়কে যে চ্যালেঞ্জ করা হল? জাকিয়া বলেন, ‘‘আমরা তো লড়াইটা জিতেই গিয়েছি। কোনও রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার অধিকার আমরা কারও থেকে ছিনিয়ে নিতে চাই না। আমরা কিন্তু সকলের সমান অধিকারেই বিশ্বাস করি।’’

হাইকোর্টে মামলাটি দায়ের হওয়ার সময় মহারাষ্ট্র সরকারও আন্দোলনকারীদের পাশেই দাঁড়িয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফ়ডণবীস বলেছিলেন, ধর্মগ্রন্থে বলা না থাকলে এ ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায় না। তবে হাজি আলি ছাড়াও দেশের বেশ কিছু মসজিদ বা দরগায় এখনও মহিলাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি পর্যন্ত।

হিন্দু মন্দিরে এমন বিতর্ক অবশ্য লেগেই থাকে। কেরলের শবরীমালায় যেমন বিতর্কের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। তবে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মহারাষ্ট্রের শিঙ্গনাপুরের শনি মন্দিরের গর্ভগৃহে এই বছরই প্রবেশের অধিকার পেয়েছেন মহিলারা। সেই আন্দোলনের মুখ ত্রুপ্তি দেশাই আজকের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যারা দরগায় মেয়েদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, এই রায় তাদের গালে একটা সপাটে চড়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন