Heavy Rain in Mumbai

পাঁচ দিনে মুম্বইয়ে বৃষ্টির পরিমাণ ছাপিয়ে গিয়েছে জুলাইয়ের বর্ষণকেও, কেন এত দুর্যোগ?

মুম্বইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। অগস্টে সাধারণত গড়ে ৫৬০ মিলিমিটারের আশপাশে বৃষ্টি হয়। কিন্তু অগস্টের কয়েক দিনে মুম্বইয়ে যত বৃষ্টি হয়েছে, তা জুলাইয়ের বৃষ্টির পরিমাণকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ২৩:২৬
Share:

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মুম্বই। ছবি: পিটিআই।

টানা চার দিন ধরে ভারী বৃষ্টি চলছে মুম্বই এবং সংলগ্ন এলাকায়। সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শহরের কিছু অংশে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গোটা অগস্ট জুড়ে যা বৃষ্টি হওয়ার কথা মুম্বইয়ে, তা গত কয়েক দিনে হয়ে গিয়েছে। আর তার জেরে বিপর্যস্ত জনজীবন। জলমগ্ন শহরের বহু এলাকা। ইতিমধ্যে প্রাণহানি হয়েছে। মুম্বইয়ের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতি বছর ভারী বৃষ্টি হয় এবং জল জমে। এই বিপর্যয় নতুন কিছু নয়। প্রশ্ন উঠছে, তার পরেও কেন প্রস্তুত ছিল না বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি) বা প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে দায়ী করা হয়েছে ভারী বৃষ্টিকে। তার পরেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement

মুম্বইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। অগস্টে সাধারণত গড়ে ৫৬০ মিলিমিটারের আশপাশে বৃষ্টি হয়। কিন্তু অগস্টের কয়েক দিনে মুম্বইয়ে যত বৃষ্টি হয়েছে, তা জুলাইয়ের বৃষ্টির পরিমাণকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। গোটা জুলাই মাস ধরে সান্তাক্রুজে বৃষ্টি হয়েছে ৭৯৮ মিলিমিটার। সেখানে গত পাঁচ দিনে সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৭৯১ মিলিমিটার। আর তাতেই বিপর্যস্ত শহর। গাছ পড়ে প্রাণ হারিয়েছে এক জন। রাস্তায় ব্যহত যান চলাচল। ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত। মুম্বইয়ে এই পরিস্থিতি নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েক বার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল বাণিজ্যনগীর। ২০১৭ সালে বিপর্যয় এতটাই বেড়েছিল, যে শহরবাসীদের একাংশ নিচু এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নিজের বাড়ি, গ্যারেজ, দোকানের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। সে রকম কিছু মানবিক ছবি চোখে পড়েছিল জলমগ্ন মুম্বইয়ে।

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়েছেন, গোটা মহারাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৪ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সোমবার নান্দেড়ে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন আট জন।

Advertisement

কেন এত বৃষ্টি?

ভারতীয় মৌসম ভবন (আইএমডি) বলছে, মৌসুমি অক্ষরেখা পাকিস্তান থেকে পূর্বে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত চলে গিয়েছে। এখন তা দিউ, সুরত, নন্দুরবার, অমরাবতীর উপর দিয়ে গিয়েছে। ফলে ওই সব অঞ্চলে বর্ষার বৃষ্টি এমনিতেই চলছে। সেই সঙ্গে ওড়িশা উপকূলের কাছে রয়েছে নিম্নচাপ, যা উত্তরে এগিয়ে চলেছে। অন্য দিকে, আরব সাগর এবং গুজরাতের উপরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। এ সবের প্রভাবেই মুম্বই-সহ দেশের কিছু জায়গায় চলছে ভারী বৃষ্টি।

মুম্বইয়ে ভারী বৃষ্টি নতুন নয়। ২০১৭ সালের জল-ছবি। ছবি: পিটিআই।

গত কয়েক দিনে কত বৃষ্টি?

মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, সোমবার থেকে মঙ্গলবার সান্তাক্রুজে বৃষ্টি হয়েছে ২৩৩ মিলিমিটার। কোলাবায় ওই ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। বিএমসি বলছে, শহরের কিছু অংশে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চিঞ্চোলিতে ওই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬৯ মিলিমিটার। কান্দিভলিতে ২২৭ মিলিমিটার, ডিনডোশিতে ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাওয়াইতে ২৯০ মিলিমিটার, ভিখরোলিতে ২৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের অগস্টে মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে ১,২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এ বার গত পাঁচ দিনে সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৭৯১ মিলিমিটার। অগস্ট মাস শেষ হতে বাকি আরও দু’সপ্তাহ।

লাগাতার বৃষ্টির কারণে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে মিঠি নদীর জল। জলমগ্ন ক্রান্তিনগর এলাকা। সেখানকার বস্তি থেকে সরানো হয়েছে ৩৫০ জনকে। উদ্ধারকাজে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মঙ্গলবার শহরের সব স্কুল, কলেজ, সরকারি, আধা-সরকারি দফতরে ছুটি ঘোষণা করেছে বিএমসি। বুধবার সকাল পর্যন্ত শহরে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত মুম্বইয়ে চলবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, বিপত্তি আরও বাড়বে। কোনও কোনও এলাকায় হাঁটু থেকে জল কোমর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।

কেন জল জমে?

মুম্বইয়ের কিছু অংশ নিচু। কিছু অংশ তুলনামূলক উঁচু। সে কারণে এমনিতেই সেখানে জল দাঁড়ানোর প্রবণতা বেশি। মুম্বইয়ে বৃষ্টির সময় যে জল জমে, তা সমুদ্রে নিষ্কাশন করা হয়। এ বার সমুদ্রে জোয়ার থাকলে নালা বন্ধ রাখা হয়, যাতে সেই জোয়ারের জল শহরের ভিতরে ঢুকে না পড়ে। সে কারণে জোয়ার এবং বৃষ্টি এক সঙ্গে চললে মুম্বইয়ে এমনিতেই জল দাঁড়িয়ে যায়। তা ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে মুম্বইয়ে তীব্র গরমের পরে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে ভারী বৃষ্টি। তার জেরেও বাড়ছে বিপত্তি। সেই সঙ্গে মানুষজনের প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে আটকে যাচ্ছে নালা।

প্রশ্ন উঠছে, মুম্বইয়ে জল জমার প্রবণতা রয়েছে জেনেও কেন বর্ষার আগেভাগে প্রস্তুতি নেয় না প্রশাসন বা বিএমসি? বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাবেই জনজীবন বিধ্বস্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement