কেন্দ্র বিল পাশ করার আগেই রাজ্যের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণ সাব-কমিটি এনআরসিতে হিন্দু বাংলাদেশিদের নাম ঢোকানোয় সম্মতি দেওয়ায় জটিলতা বাড়ল। এনআরসি নবীকরণের দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র কমিশনার প্রতীক হাজেলা অবশ্য বলেন, রাজ্য সরকার তার মতামত জানাতেই পারে। এ নিয়ে যা সিদ্ধান্ত তা সুপ্রিম কোর্ট ও কেন্দ্রের নির্দেশ মেনেই হবে।
রাজ্যে হিন্দু বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্ক চলছে। বিজেপি বরাবরই তার পক্ষে। কিন্তু শাসক জোটের শরিক হয়েও অসম গণ পরিষদ তার বিরুদ্ধে। কারণ, অসম আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অগপর জন্ম। অগপ সরকারি ভাবে চুপ থাকলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত এ নিয়ে সরব। তিনি দিল্লিতেও হিন্দু বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন।
এই বিতর্কের মধ্যে গত কালই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গুয়াহাটিতে এসে জানান, অসম চুক্তির সফল রূপায়ণ ও ষষ্ঠ দফা মেনে ভূমিপুত্রদের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্র ও রাজ্য বদ্ধপরিকর। নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী সংক্রান্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে গড়া যৌথ সংসদীয় কমিটি এখনও তাদের রিপোর্ট জমা দেয়নি।
কিন্তু এ দিন এনআরসি নবীকরণ নিয়ে তৈরি মন্ত্রিসভার সাব-কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী সামনে এনে ডিএসওয়াইএফ ও মুক্তিদূত নামে দু’টি সংগঠন দাবি করে অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, কৃষিমন্ত্রী অতুল বরা, জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী রঞ্জিৎ দত্ত, প্রতীক হাজেলা, এডিজি (সীমান্ত) আর এম সিংহদের নিয়ে গড়া সাব-কমিটি হিন্দু বাংলাদেশিদের ও তাদের পরিবার, বংশধরদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করায় সম্মতি দিয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘‘ডি ভোটার বা সন্দেহজনক ভোটারদের বংশধরদের নাম এনআরসিতে তোলা হবে না। অবশ্য ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা সে দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্র যে নির্দেশ দিয়েছে সেই নির্দেশ মেনে ওই ধর্মাবলম্বী, শরণার্থীদের নাম ও তাঁদের বংশধরদের নাম তালিকাভুক্ত করা যাবে।’’ ওই সংগঠন দু’টির প্রশ্ন, কেন্দ্র যেখানে বিল এখনও সংসদে পাশ করেনি, তার আগেই রাজ্য আগ বাড়িয়ে কেন এ ক্ষেত্রে হিন্দু বাংলাদেশিদের নাম (যদিও হিন্দু বাংলাদেশি শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি) ডি-ভোটারের তালিকা থেকে বাদ দিতে সম্মতি দিল?
রাজ্যে এখন ডি-ভোটারের সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব সংগঠনগুলির দাবি, হিন্দু বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিলে আরও প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের ভার অসমকে নিতে হবে। বাংলাদেশের বাকি হিন্দুরাও নিশ্চিন্তে অসমে ঢুকে পড়বে। বৈঠকে থাকা মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, ‘‘হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে আমাদের স্থিতি বরাবরই এক। তার প্রতিফলনই বৈঠকে দেখা গিয়েছে।’’ কিন্তু বিজেপির মত আর জোট সরকারের মত কী একই? যেখানে অগপ বরাবরই বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে। পরিমলবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সরকারের মাথা। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন হিন্দু বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিলে রাজ্যের আপত্তি নেই।’’ অগপ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। প্রতীক হাজেলা বলেন, ‘‘ডি-ভোটাদের বংশধরদের নাম ঢোকানো প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছিল ওই বৈঠকে। মন্ত্রিসভা বা সাব-কমিটির সিদ্ধান্ত রাজ্যের সুপারিশ মাত্র। তা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। আমরা বৈঠক করে রাজ্যের সুপারিশ কেন্দ্রকে পাঠিয়েছি। কিন্তু এনআরসির ব্যাপারে সব কাজই সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে হচ্ছে। আদালত ও কেন্দ্রের চূড়ান্ত নির্দেশ মেনেই সব রূপায়ণ হবে।’’