নাগরিক পঞ্জী

কী নথি দিলেন গৌতমের পত্নী, খুঁজছে বরাক

জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে (এসআরসি) নাম তুলতে কী নথি জমা দিলেন গৌতম রায়ের স্ত্রী মন্দিরাদেবী— তা জানতে উৎসুক ভিন রাজ্যে বাপের বাড়ি থাকা বরাকের গৃহবধূরা! কারণ মন্দিরাদেবীর আদি বাড়িও অসমে নয়, পশ্চিমবঙ্গে।

Advertisement

অমিত দাস

হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে (এসআরসি) নাম তুলতে কী নথি জমা দিলেন গৌতম রায়ের স্ত্রী মন্দিরাদেবী— তা জানতে উৎসুক ভিন রাজ্যে বাপের বাড়ি থাকা বরাকের গৃহবধূরা!

Advertisement

কারণ মন্দিরাদেবীর আদি বাড়িও অসমে নয়, পশ্চিমবঙ্গে।

দু’দিন আগে সংশ্লিষ্ট দফতরে গিয়ে নিজের এবং স্ত্রী’র এসআরসি সংক্রান্ত নথি দাখিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর বরাক বিষয়ক উপদেষ্টা গৌতম রায়। তার পর থেকেই ওই নথির খবর জানতে আগ্রহ বেড়েছে উপত্যকায়।

Advertisement

এনআরসি তালিকায় অসমের অনেক গৃহবধূর নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার আশঙ্কা ছড়িয়েছে। ভিন রাজ্যে বাপের বাড়ি থাকায় প্রয়োজনীয় নথি কারও কারও পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। প্রশাসনিক নির্দেশে, মহিলাদের ক্ষেত্রে এনআরসি আবেদনপত্রে তাঁদের বাবা বা ঠাকুর্দার ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে অসমে থাকার প্রমাণপত্র দাখিলের কথা বলা হয়েছে।
তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। ভিন রাজ্যে বাপের বাড়ি থাকা মহিলারা ওই সব নথি কী ভাবে জোগাড় করতে পারবেন? তা হলে কি বিয়ের পর অসমে আসা মহিলাদের নাম নাগরিক পঞ্জীতে উঠবে না?

এ নিয়ে সদুত্তর প্রশাসনের কোনও মহলের কাছ থেকে এখনও মিলছে না। সে জন্যই কৌতূহল ছড়িয়েছে মন্দিরাদেবীর দাখিল করা নথির বিষয়ে!

গৌতম-পত্নী মন্দিরাদেবী আদতে অসমের বাসিন্দা নন। তাঁর আদি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে। এ বিষয়ে মন্দিরাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআরসি আবেদনপত্রের সঙ্গে মন্দিরাদেবী হাইলাকান্দির স্কুলে পড়াশোনা করার প্রমাণপত্র জমা দিয়েছেন। ৬০-এর দশকে তাঁর বাবা মুরলীধর সরকার হাইলাকান্দির একটি ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। মন্দিরাদেবী স্থানীয় ইন্দ্রকুমারী বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।

ভিন রাজ্যের কোনও মহিলার ক্ষেত্রে অসমের স্কুলে পড়াশোনার প্রমানপত্র কি যথেষ্ট?

হাইলাকান্দির সার্কল অফিসার সরফরাজ হক বলেন, ‘‘আবেদন যে কেউ করতে পারেন। পরে তা পরীক্ষা করা হবে। তার পরই জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে তাঁর নাম সামিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

মন্দিরাদেবীর নাম এনআরসি-তে থাকবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু অনেকে আশায় রয়েছেন এই ভেবে— মন্দিরাদেবীর নাম যদি স্থানীয় স্কুলের নথি দাখিল করাতেই এনআরসি তালিকায় উঠে যায়, সে ক্ষেত্রে অসমে বসবাসকারী ভিন রাজ্যের অনেক গৃহবধূর চিন্তা কমবে। তাঁরাও একই ভাবে এনআরসি আবেদনপত্রের সঙ্গে ওই ধরনের নথি দাখিল করতে পারবেন।

মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা গৌতমবাবু স্ত্রীর পরিচয়ই শুধু নয়, মন্দিরাদেবী আলগাপুর কেন্দ্রের নির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়কও। কেউ কেউ বলছেন, ভিন রাজ্যে বাপের বাড়ি হওয়ার জেরে যদি এক জন বিধায়কও এনআরসি তালিকায় নাম তুলতে গিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়েন, তা হলে সাধারণ মহিলার কী হাল হবে?

উত্তরপ্রদেশের বেনারসে শ্বশুরবাড়ি লালার গাগলাছড়ার বাসিন্দা মনোজ পাণ্ডের। তাঁর স্ত্রী কবিতাদেবী। দুই সন্তান নিয়ে তাঁদের সংসার। কিন্তু এনআরসি নিয়ে সরকারি ঘোষণায় স্বস্তি উড়েছে দম্পতির। কবিতাদেবীর কথায়, ‘‘কী করব বুঝতে পারছি না। এনআরসি সেবাকেন্দ্রেও কোনও সদুত্তর পাইনি।’’

কবিতাদেবীর মতো অনেক গৃহবধূ তাই এখন তাকিয়ে রয়েছেন মন্দিরা রায়ের দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন