পানমশলা সংস্থার কর্ণধারের পুত্রবধূ দীপ্তি চৌরাসিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের নামী পানমশলা সংস্থার কর্ণধারের পুত্রবধূ দীপ্তি চৌরাসিয়ার মৃত্যুতে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন দীপ্তির ভাই। এ বার মুখ খুললেন তাঁর মা। শুধু তা-ই নয়, কন্যার মৃত্যুতে তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন।
দীপ্তির পরিবারের তরফে যে এফআইআর করা হয়েছে, সেখানে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিয়ের পর থেকেই দীপ্তির উপর মানসিক নির্যাতন চলত। পরে সেটি শারীরিক নির্যাতনে পৌঁছোয়। দীপ্তির মায়ের অভিযোগ, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে দীপ্তির স্বামী অর্পিত এবং শাশুড়ি দু’জনে মিলে দীপ্তিকে বেধড়ক মারধর করেন। সেই সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বাড়ির দোতলা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামানো হয়।
দীপ্তির মায়ের দাবি, সেই ঘটনার পর তাঁদের কাছে সব জানান মেয়ে। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবার মুখোমুখি বসে। সেই সময় অর্পিত এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা ক্ষমা চেয়ে নেন। এমনকি আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে আর কোনও দিন এই ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু পরিস্থিতি তাতেও বদলায়নি। আরও অভিযোগ, সন্তান জন্ম দেওয়ার এক মাস পর দীপ্তি জানতে পারেন তাঁর স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হয়। তার পরই হাওড়ায় বাপেরবাড়িতে ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন দীপ্তি।
এই ঘটনার এক বছর পর দীপ্তির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা হাওড়ায় আসেন। দীপ্তিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টি নিয়ে যাতে লোকসমাজে হাসাহাসি না হয়, সেই দিকটাও নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং দীপ্তির প্রতি যত্ন নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে আবার শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দীপ্তির বাপেরবাড়ির লোকেরা তাঁর স্বামীকে দিয়ে মুচলেকা দেওয়ান যাতে ভবিষ্যতে তাঁর প্রতি কোনও অন্যায় না হয়। সেই ঘটনার পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলালেও, দু’-তিন বছর পর থেকে আবার অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। দীপ্তির মায়ের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে শাসানো হত যাতে কারও কাছে মুখ না খোলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে শ্বশুরবাড়ির কোনও অনুষ্ঠান, এমনকি বাপেরবাড়ির অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে দেওয়া হত না। ২০২৪-এর এপ্রিলে স্বামীর মোবাইলে অশ্লীল কিছু বিষয় উদ্ধার করেন দীপ্তি। তা নিয়ে আবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে।
দীপ্তির মা জানিয়েছেন, ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁর মেয়ে ফোন করেন। তাঁকে জানান ছেলের ফোন নিয়ে অর্পিতের সঙ্গে অশান্তি হয়েছে। তার পরই ফোন কেটে যায়। পরে ফোন করলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। দীপ্তির শাশুড়িকে ফোন করলে জানান, তিনি বিমানবন্দরে রয়েছেন। জামাইকে ফোন করেন দীপ্তির মা। তিনি জানান, জিমে রয়েছেন। তার পরই বিকেলে ফোন আসে দীপ্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।