Tripura

Tripura: সিপিএম-তৃণমূল ভোট ভাগেই বিজেপি ‘নিরঙ্কুশ’

খাস আগরতলা পুর নিগমে বিজেপি জিতেছে ৫১-০ ফলে। কিন্তু সেখানেই ১৬টি ওয়ার্ডে সিপিএম ও তৃণমূল মিলে বিজেপির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী, বাপী রায়চৌধুরী

কলকাতা ও আগরতলা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সাদা চোখে চুনকাম! নিরঙ্কুশ সাফল্য বিজেপির। কিন্তু একটু গভীরে গিয়ে দেখলে ত্রিপুরার পুরভোটে ‘গেরুয়া ঝড়’ ততটা প্রবল নয়!

Advertisement

যে নির্বাচনকে বিরোধীরা এক কথায় ‘জুলুমের ভোট’ বলে চিহ্নিত করেছেন, সেই নির্বাচনেও দুই বিরোধী দল সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেসের মোট প্রাপ্ত ভোট বেশ কিছু জায়গাতেই শাসক বিজেপির চেয়ে বেশি। ওয়ার্ডভিত্তিক পরিসংখ্যানের প্রাথমিক বিশ্লেষণ বলছে, পুর নিগম, পুর পরিষদ এবং নগর পঞ্চায়েত মিলিয়ে প্রায় ৪০টি আসন এমন আছে, যেখানে জয়ী বিজেপির ভোট সিপিএম ও তৃণমূলের মোট ভোটের চেয়ে কম। দেদার বেনিয়মের অভিযোগের বদলে পুরভোট যদি সুষ্ঠু ভাবে হত, তা হলে আলাদা আলাদা ভাবে লড়েও বিরোধীদের ভোট আরও বাড়ত এবং বিজেপির জয়ের দাপট তাতে বেশ খানিকটা খর্ব হত— এই যোগফল দেখে রাজনৈতিক শিবিরের প্রাথমিক ধারণা এমনই।

বিরোধী শিবিরে ভাগাভাগি থাকলে শাসক পক্ষ লাভবান হবে— নির্বাচনী পাটিগণিতে এটাই দস্তুর। ত্রিপুরার পুরভোটে এর সঙ্গেই উল্লেখযোগ্য তথ্য, এই রাজ্যে কংগ্রেস ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যা ভোট পেয়েছিল, পাঁচ বছর পরে ২০১৮ সালের বিধানসভায় তার পুরোটাই চলে গিয়েছিল বিজেপিতে। কংগ্রেস নেতারা তখন দল বেঁধে তৃণমূল ঘুরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এর পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ভোট বাড়িয়েছিল। কিন্তু এই পুরভোটে তাদের ভোট কমে গিয়ে আবার ২%-এ এসে দাঁড়িয়েছে, যা প্রায় ২০১৮ সালের সমান। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই মত, কংগ্রেসের বাক্স থেকে বেরিয়ে যাওয়া ভোটের জোরেই মূলত তৃণমূল এ বার ত্রিপুরায় জমি প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্য দিকে, লোকসভার তুলনায় প্রায় ২% ভোট বেড়েছে বামেদের। আর প্রথম বার পুরভোটে লড়তে নেমে তৃণমূল পেয়েছে ১৬.৩৯% ভোট।

Advertisement

খাস আগরতলা পুর নিগমে বিজেপি জিতেছে ৫১-০ ফলে। কিন্তু সেখানেই ১৬টি ওয়ার্ডে সিপিএম ও তৃণমূল মিলে বিজেপির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ বিরোধী ভোট ভাগাভাগির ফায়দা নিয়ে ‘নিরঙ্কুশ’ হয়েছে বিজেপি। মোট ১৩টি পুর এলাকায় ছড়িয়ে থাকা যে ২২২টি ওয়ার্ডে ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে ২১৭টিতে জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। ভাগাভাগির অঙ্ক না থাকলে বিজেপির এই ‘একাধিপত্যেও’ ফাটল ধরতে পারতো!

রাজধানী আগরতলা শহরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিধানসভা কেন্দ্র বনমালীপুরের কথাই ধরা যাক। ওই এলাকার চারটি ওয়ার্ডে বিজেপি পিছিয়ে সিপিএম ও তৃণমূলের মিলিত ভোটের চেয়ে। শাসক দলের দুই ‘বিক্ষুব্ধ’ বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণের আগরতলা এবং আশিস কুমার সাহার টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রের ৬টি ওয়ার্ড রয়েছে এমন তালিকায়। আবার ভোটের আগে তৃণমূল-সহ বিরোধীদের ‘হুমকি’ দিয়ে বিতর্ক বাধানো বিজেপি বিধায়ক সুরজিৎ দত্তের রামনগর কেন্দ্রেও আছে এমন ওয়ার্ড।

আগরতলার বাইরে বেরোলে সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের চারটি, খোয়াই পুরসভার চারটি, তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের চারটি বা আমবাসা পুরসভার ১৫টির মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডেই পাওয়া যাচ্ছে এমন চিত্র, যেখানে সিপিএম ও তৃণমূল মিলে বিজেপির চেয়ে বেশি ভোট ঘরে তুলেছে। তার বাইরে আমবাসায় একটি করে ওয়ার্ডে জয়ীও হয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএম। পুরভোটে মোট ১৫৮টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে আছে বামেরা, তৃণমূল ৫৯টিতে।

ভাগাভাগির সমীকরণকে এক এক পক্ষ এক এক রকম দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখছে। তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা জোর গলায় বলছি, ভোটে বিজেপি রিগিং-ছাপ্পা, জুলুম না করলে বেশ কিছু জায়গায় তারা বোর্ড গড়ার জায়গায় পৌঁছত না! আমরা আরও ওয়ার্ডে জিততাম, বামপন্থীরাও আরও ওয়ার্ড পেত।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, ভোট ভাগাভাগির জেরে বিজেপির বেরিয়ে যাওয়ার তথ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমসর্থন অনেক জায়গাতেই শাসক দলের সঙ্গে নেই। শাসক দলের পক্ষে আবার আগরতলার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী বিজেপি প্রার্থী দীপক মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের এখানে কোনও নিজস্ব শক্তি ছিল না। ওরা কোথাও বাম ভোট ভেঙেছে, কংগ্রেসের ভোট অনেকটাই টেনে নিয়েছে। তাতে আমাদের কোনও ক্ষতি হয়নি।’’

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পবিত্র করের মতে, ‘‘এই ভাগাভাগিটা মূলত হয়েছে অ-বাম ভোটের। কংগ্রেসের ভোট অনেকটাই তৃণমূল পেয়েছে। আবার বিজেপির একটা অংশের ভোটও ওদের পক্ষে গিয়েছে। বনমালীপুর তার উদাহরণ, ওখানে তৃণমূলের লোকজন বা এজেন্ট কিছুই ছিল না।’’ বাংলার বামেদের বড় অংশই অবশ্য মনে করে, ত্রিপুরায় বিরোধী ভোট ভেঙে আখেরে বিজেপির সুবিধা করতে সাহায্য করেছে তৃণমূল।

এর পরে কোটি টাকার প্রশ্ন, ভোট ভাগ রুখতে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে কি বাম, তৃণমূল-সহ বিরোধী জোট হবে? বামেদের তরফে এখনও উত্তর, না! তৃণমূল নেতৃত্বেরও দাবি, তাঁরা নিজেরাই বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন